বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমরা সকলেই রাজনৈতিক কর্মী। আমাদের সবচেয়ে বড় সফলতা হল আপনার প্রতি যখন মানুষের বিশ্বাস থাকে, আস্থা থাকে। আপনার মিছিল বা জনসমাবেশটি যখন বড় হয়। এটি আপনার প্রতি আস্থার একটি প্রতিফলন। তবে ভোটের মাধ্যমে জনগণের সমর্থন পাওয়াই হল জনগণের আস্থার প্রতিফলন। ভোটের আস্থাটি আমাদের অর্জন করতে হবে। সেই ভোটে আস্থা অর্জন করতে হলে মুখে বললে তো হবে না। মানুষ জানতে চায় আমরা তাদের জন্য কী করবো।
মানুষ যখন জানতে পারে আপনি বিএনপির কর্মী তখনই আপনাকে জিজ্ঞেস করে তোমরা এটার কী করবে বা ওটার কী করবে। আমরা আস্থার একটা পর্যায়ে আছে। কিন্তু আমাদের এই আস্থাকে ধরে রাখতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আগামীর ভোটই শুধু ভোট না। অনেকে বলে তারেক রহমান শুধু ভোট ভোট করে। আমরা রাজনৈতিক দল, আমরা তো ভোটের কথাই বলব। আগামীর নির্বাচন করেই কী আপনি ক্ষ্যান্ত দিয়ে দিবেন। মানুষ জানতে চায় আমরা কী করবো। এখন শুধু কথায় চিড়া ভিজবে না। জনগণকে জবাব দিতে হবে। তাদের আস্থা ধরে রাখতে হবে। নির্বাচিত হলে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। কারন পরবর্তী নির্বাচনের আগে জনগণকে দেখাতে হবে আপনি কী কী করতে পেরেছেন। সবটা হয়ত আমরা পারব না তবে যতটুকু করবো তা জনগণের কাছে তুলে ধরব আমরা। তখন জনগন এর বিচার করবে।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ৩১ দফা কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আমাদের বহু সহকর্মী খুন হয়েছে। জুলাই আগষ্ট আন্দোলনে আমাদের পাঁচশতাধিক নেতাকর্মী খুন হয়েছে। আর কোন রাজনৈতিক দলের এত মানুষ মারা গেছে কীনা জানি না আমরা। গত ১৬ বছরে আমাদের দলের বহু নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙে দেয়া হয়েছে। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে বললে আমার ওপর নির্যাতন হয়েছে। আমরা বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। আমার মাকে নির্যাতন করা হয়েছে। আমার ভাই তাদের অত্যাচারে মারা গেছে। আমরা এই নির্যাতনের জবাব যদি তাদের মত দেই তাহলে তো হবে না। তারা অধম বলে আমরা অধম হবো নাকি। আমরা এর জবাব ৩১ দফা সফল করার মাধ্যমে দেব। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই তাদের জবাব দেয়া হবে।
তিনি বলেন, এখানে যারাই আছেন প্রত্যেকের নামে একটি হলেও গায়েবি মামলা রয়েছে। এত নির্যাতন সহ্য করে জেল খেটেছেন আপনারা, কষ্ট করেছেন। কেন আপনারা এমন কাউকে সুযোগ দিবেন যে আপনাদের সকল কষ্টে পানি ঢেলে দেবে। কিছু সংখ্যক লোক তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য আমাদের সকল কষ্টে পানি ঢেলে দিচ্ছে। কেন তাদের সেই সুযোগ দেবেন আপনারা।
মানুষ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। আপনাদেরও জনগণের দিকে তাকাতে হবে। আপনাদেরও বুঝতে হবে কী করলে জনগণ আপনাকে আরও পছন্দ করবে। আপনার অধীনে অনেক নেতাকর্মী থাকবে। তাদের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পরিবারের দুষ্ট বাচ্চাদের যেমন টাইট দিয়ে রাখতে হয় তেমনি দলের ভেতরও দুষ্টরা আছ, থাকতে পারে। আমাদের এই দুষ্টদের টাইট দিয়ে রাখতে হবে। তারা হয়ত দলের অনেক ক্ষতি করে ফেলছে।
আপনাদের মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। জনগণের আস্থা ধরে রাখতে হবে। এই আস্থা ধরে রাখার দায়িত্ব আপনার। এটা জনগণের দায়িত্ব না। আমরা নিজেদের সংযত রাখবো এবং আমাদের সহকর্মীদের সংযত রাখতে চেষ্টা করবো। মানুষ চায়না এমন কাজ কেন আপনি করবেন, যেখানে আপনাদের আস্থার সংকট দেখা দেবে।
স্বৈরাচার যখন জনগণকে অধিকার বঞ্চিত করে অস্ত্রের মুখে ক্ষমতা ধরে রেখেছিল তখন আমি বলেছিলাম টেক ব্যাক বাংলাদেশ। এর অর্থ হল জনগণের বাকস্বাধীনতা ও জনগণের অর্থনৈতিক অধিকার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়া। বাংলাদেশে কী হবে সেটা বাংলাদেশের মানুষ ঠিক করবে।
টেক ব্যাক বাংলাদেশের প্রথম লক্ষ্য দেশের মানুষের সহযোগীতায় দেশের গণতন্ত্রকামী দলগুলো স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে। স্বৈরাচারের মাথা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। গত ১৬ বছর তারা নিজেদের আখের গোছাতে ভিনদেশের তাদের প্রভুকে খুশি করতে দেশের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে গেছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য (কেন্দ্রীয় দপ্তরে সংযুক্ত) আবদুস সাত্তার পাটোয়ারীর সঞ্চালনায় এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, ‘আমরা বিএনপি পরিবারের’ কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুম্মান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু প্রমুখ।