ফাইল ছবি
জুলাই অভ্যুত্থানের আন্দোলনে যাত্রাবাড়ীতে ছাত্র-জনতার ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলাকারী সেই লিটন আকন্দ ওরফে ‘শুটার’ লিটন জেল থেকে বেরিয়ে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
প্রশ্ন উঠেছে, এরকম আসামি কিভাবে জামিন পেল। জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র হত্যাসহ বেশ কয়েকটি মামলার আসামি হয়েও রহস্যজনকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন এই স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা। দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন উত্তর যাত্রাবাড়ী, ধলপুর, মানিকনগর ও গোলাপবাগ এলাকা। আবারও শুরু করেছেন মাদকব্যবসা। লিটন ও তার সহযোগীদের অপকর্মে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লিটনের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন হামলা, অস্ত্র-মাদক ও হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন ধারায় মোট ৯টি মামলা রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, তাকে ধরার পর মাদক মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। আর এই সুযোগটা যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জুলাই আন্দোলনে যাত্রবাড়ীতে ছাত্র-জনতার ওপর দেশীয় অস্ত্র দিয়ে প্রাণঘাতী হামলা চালোনোসহ পতিত আওয়ামী সরকারের ছত্রছায়ায় থেকে এমন কোনো অপকর্ম নেই যে- ঘটায়নি ‘শুটার’ লিটন ও গ্যাং। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র-মাদক ও চাঁদাবাজি মামলাসহ অভিযোগ রয়েছে। অথচ পুলিশ ‘শুটার’ লিটনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্কৃয়তায় ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে লিটন ও তার সহযোগীরা।
এর আগে, জুলাই অভ্যুত্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর লিটনের রামদা-চাপাতি হামলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর বেপরোয়া প্রাণঘাতী হামলা চালাচ্ছেন সন্ত্রাসী লিটন। এরপর ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর গা ঢাকা দেন লিটন। এ ঘটনায় গেল সেপ্টেম্বরে দুই সহযোগীসহ ‘শুটার’ লিটনকে গ্রেফতার করে র্যাব-৩। গ্রেফতারের সময় লিটনের গোপন আস্তানা থেকে ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণে ব্যবহৃত চারটি চাপাতি, মাদকদ্রব্য ও গান পাউডার উদ্ধার করা হয়।
পরে দেখা যায় অন্য কোনো মামলা নয়, শুধুমাত্র মাদক মামলা গ্রেফতার দেখানো হয় লিটনকে। তিনি সেই মামলায় জামিন পেয়ে জেল থেকে বের হয়ে নতুন করে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তবে একাধিক মামলা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ তাকে আটক করছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় জানান, যাত্রাবাড়ীতে লিটন ও তার চক্র মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজি করছেন দেদারছে। টাকা খেয়ে পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
অভিযোগ রয়েছে, ৬-৭ বছর আগে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় ফিরোজ নামের এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলার প্রধান আসামি লিটন আকন্দ। এরপর থেকেই তিনি এলাকায় পরিচিতি পান ‘শুটার লিটন’ নামে। এর আগে যাত্রাবাড়ীতে জুয়েল নামে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে তার বাড়িতে ঢুকে গুলি করেন লিটন ও তার ভাই মিঠু। তার পর থেকে মিঠু গা ঢাকা দিয়েছেন। এছাড়া ‘শুটার লিটন’ চাঁদাবাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে তাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতেন। তিনি ও তার সহযোগীরা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন।