বুধবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫

|

মাঘ ১ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

ফাতেমা মনিরের ভাই ঋণ খেলাপি এমদাদ গুলশান থেকে গ্রেফতার 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৬:৫৮, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

ফাতেমা মনিরের ভাই ঋণ খেলাপি এমদাদ গুলশান থেকে গ্রেফতার 

এমদাদ হোসেন

আওয়ামী প্রভাব খাটিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহায়তায় তিনটি ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে একশো কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন এমদাদ হোসেন নামে এক ব্যাবসায়ী। রবিবার গুলশান থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

নারায়নগঞ্জ বাড়ি হওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা শামিম ওসমানের প্রভাব খাটিয়ে প্রতারণার করে লোন নিয়েছে ইমদাদ। তার বোন ফাতেমা মনির সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের নেতা ছিলেন।

সাহারা নিটার্স, মার্প নীট কম্পোজিট ও সাহারা ব্রিকসসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম দেখিয়ে কমার্স ব্যাংক, লঙ্কা বাংলা ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেয় এমদাদ। ব্যাংক কর্মকর্তাদের অভিযোগ, লোনের বিপরীতে যে জামানত দিয়েছে সেই জমিও বিক্রি করে দিয়েছে। টাকা তুলতে না পারায় ব্যাংকগুলো সম্পত্তি দখলে নেয়া ও ব্যাক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। দ্রুত এই প্রতারককে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা। 

এমদাদ হোসেন নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা উপজেলার আলীগঞ্জের বাসিন্দা। সাহারা নিটার্স, মার্প নীট কম্পোজিট ও সাহারা ব্রিকসের ওউনার। এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে তিন বেসরকারী ব্যাংক থেকে একশো কোটি টাকার বেশি লোন নিয়েছে এমদাদ হোসেন। 

বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক মতিঝিল প্রধান শাখা থেকে তথ্য পাওয়া যায়, মেসার্স সাহারা নিটার্স নামে ২২ কোটি টাকা ও মেসার্স মার্প নীট কম্পোজিট লি. ১০ কোটি টাকা মোট ৩২ কোটি টাকার ঋণ খেলাপির তালিকায় রয়েছে প্রতিষ্ঠান দুটির মালিক ইমদাদ। বর্তমানে প্রতিষ্ঠান দুটি বন্ধ রয়েছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানান, দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকের লোন পরিষদ করছে না এমদাদ।  এর আগের ডিএমডি রেজাউল করিম এর ছত্রছায়ায় তিনি ঋণ পেয়েছেন।  এই উচ্চ কর্মকর্তার জন্য শাখা পূর্বে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।

এসময় তারা জানান, ব্যাংকের কাছে যে সম্পত্তি বন্ধক রেখে ছিলো ব্যাংকে না জানিয়ে বিক্রি করে দেয় এমদাদ হোসেন। এমন জালিয়াতির ঘটনা ব্যাংকের কাছে ধরা পড়ার পর তারা আদলতে প্রতারণা মামলা দায়ের করেন। ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের নামে মেশিন আমদানির করে তা বাহিরে বিক্রি করে দেয়ারও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। সম্পত্তি ব্যাংকের কাছে নিয়ে নেওয়াসহ তার বিরুদ্ধে ৫টি মামলা করেন প্রতিষ্ঠানটি। 

সাহারা গ্রিন ব্রিকস যার মালিক ইমদাদ হোসেন এই প্রতিষ্ঠানের কাছে ৬০ কোটি টাকা পাবে লঙ্কা বাংলা ফাইনান্স। ঋণ নিতে যে পরিমান সম্পত্তি জামানত দেয়ার কথা তা না দিয়ে টাকা তুলে নেয় তিনি। যেই সম্মত্তি পেয়েছে তাও বিক্রি করতে পারছেনা প্রতিষ্ঠানটি আইনিসহ নানা জটিলতার কারণে। ইতিমধ্যে আদালতের স্বরনাপন্ন হয়েছে লঙ্কাবাংলা ফাইনান্স। 

এমনকি তিনি ফ্ল্যাট বন্ধক না রেখে ফ্ল্যাট ঋণের বিপরীতে ২ কোটি টাকারও বেশি নিয়েছেন। যদিও তিনি ৪ টি ফ্ল্যাট বন্ধক রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন কিন্তু একটিও করেননি। ২টি ফ্ল্যাট ইতিমধ্যেই অন্য পার্টির কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন

এদিকে, দেশের বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে ১১ টি ব্যাংকের নাজুক অবস্থা তার একটি গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। এস আলম গ্রুপের আওতাধীন ছিলো এই ব্যাংক। সাহারা এগ্রো ফিশারিজ নামে প্রতিষ্ঠানটি থেকে যে পরিমান ঋণ নিয়েছে তা পুরোটাই জালিয়াতি করে। বিক্রি করে দেয়া সম্মত্তি দিয়ে লোন নিয়েছে এই ব্যাংক থেকে। ইমদাদ হোসেনের কাছে পাবে ১০ কোটি টাকার বেশি। জালিয়াতি করে এই লোন নেয়ার পরেও কোন ব্যবস্থায় যায়নি প্রতিষ্ঠানটি।   

এছাড়াও গাড়ী লোন নিয়েছে। প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পায়নি পরিবারের সদস্যরাও। এমনকি সম্প্রতি মারা যাওয়া তার ভাইয়ের সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করছেন। এমনকি তার ইয়াটিম ২ ভাতিজি দিকে দেখেন না ।

জনসাধারণ তার ধূর্ত ও প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে ভয় পেত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ি, দেশে ঋণ খেলাপির পরিমান ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। এই তালিকার মধ্যে ইমদাদ হোসেনও রয়েছে। প্রতারণা করে দেশের টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ব্যাঙ্কের টাকা লুটপাট করে আর বিজনেস ক্লাসে চড়ে বিলাসী জীবনযাপন করছেন।

এসব প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতে এখন অন্য রাজনৈতিক আশ্রয়ে গিয়ে বাঁচার চেষ্টায় রয়েছে প্রতারক ইমদাদ হোসেন। দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চায় ভুক্তভোগিরা।        

এবিষয়ে যোগায়োগ করলে গুলশান থানার ওসি মো. তৌহিদ আহম্মেদ তার গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।