
ডা. শফিকুর রহমান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, যুগ যুগ ধরে কষ্টে আছেন নারায়ণগঞ্জবাসী, নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাসের রাজধানী বানিয়ে রাখা হয়েছিল।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১ টায় নারায়ণগঞ্জের ইসদাইরে জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আমারও অনেক আগে জামায়াতে ইসলামীর একজন আমীর ছিলেন। একজন দুর্ধর্ষ লোক মহাসড়কের পাশে একটি ব্যানারে লিখেছিলেন নারায়ণগঞ্জে অমুকের প্রবেশ নিষিদ্ধ। আরেকটি সভায় তিনি ডিসি এসপির সামনে বলেছিলেন, আমার নামে একটি অগ্রিম খুনের মামলা লিখে রাখেন আমি অধ্যাপক গোলাম আজমকে খুন করতে চাই। আলহামদুলিল্লাহ স্বৈরাচারী সরকারের জুলুমের শিকার হয়ে কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু গডফাদারের সুযোগ হয়নি তাকে খুন করার। এই অধ্যাপক গোলাম আজমকেই তিনি নিষিদ্ধ করেছিলেন। যে ভাই নিষিদ্ধ করেছিলেন আজকে তিনি কোথায়? অহংকার ভালো জিনিস নয়। তিনি কি নারায়ণগঞ্জে আছেন?
গর্ব অহংকার করতে নাই, দাম্ভিকরা করতে চাই, ক্ষমতার ছরি ঘুরাতে নাই, মানুষকে খুন করতে নাই, সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দিতে নাই, তাদের লালন করতে নাই। এই কাজগুলো যারা করে দুনিয়াতে তারা করুণ পরিনতি ভোগ করেন এবং আখিরাতের আদালতেও আল্লাহ তাদের শুলে চড়াবেন। দাম্ভিকতা পরিহার করুন, তওবা করুন। আগে মানুষ হন তারপর মুমিন হন।
এই বাংলাদেশে কে কোন ধর্মের এই প্রশ্ন সম্পূর্ণ অবান্তর। ১৮ কোটি মানুষের দেশ একটা সাজানো ফুলের বাগান। আল্লাহ যাদেরকে এই বাগানে পয়দা করেছেন মিলেমিশে সবাই হবে এর অধিবাসী। বাংলাদেশের সংবিধান সবাইকে সাংবিধানিক অধিকার দিয়েছে। বিগত ৫৪ বছর এ জাতিকে ভাগ করে রাখা হয়েছে। এই কাজটি সুকৌশলে আওয়ামীলীগ করেছে। বিভক্ত জাতি কখনো বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনা।
তিনি বলেন, সংবিধান যতগুলো অধিকার দিয়েছে সবগুলো এদেশে নিশ্চিত হবে। শাসন ক্ষমতায় যারা যাবে তাদের অধিকার নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব এটা কোন দয়ার দান নয়। বাঁচার অধিকার, সম্মান পাওয়ার অধিকার, বিচার পাওয়ার অধিকার, স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার অধিকার, সন্তানের শিক্ষা পাওয়ার অধিকার, কাজের অধিকার সহকিছু তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। এটাই স্বাধীনতার মূল চেতনা। এই সমাজ হবে বৈষম্যহীন, মানবিক।
শেখ হাসিনার সরকার সবগুলো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনটি মৌলিক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পার্লামেন্ট, নির্বাহী ও বিচার ব্যবস্থার সবগুলোতে আওয়ামীলীগ ধ্বংস করেছে। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের বিচারক এজলাসে দাঁড়িয়ে বলতে পারেন আমি হচ্ছি শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ। লজ্জা! একজন বিচারক যখন শপথ নেন তখন তিনি বলেন, আমি কারো প্রতি কোন পক্ষ বিপক্ষ অবলম্বন করবোনা, নিরপেক্ষ থাকবো। যার যা পাওয়া বিচারে সে তাই পাবে। সে যখন বলে আমি অমুক দলকে অন্তরে ধারণ করি, তার পক্ষে কি ন্যায়বিচার সম্ভব?
তাদের কেউ কেউ এদেশের নন্দিত গর্বিত ব্যক্তিদের রায় দেয়ার পর টক শোতে গিয়ে বলতেন, অমুককে আজ ফাঁসি দিয়ে এসেছি। নাম ধরে ধরে বলতেন। তিনি একজন বিচারপতি তিনি টক শোতে যাবেন কেন? তার তো বিচারাঙ্গনের বাইরে বিচরণের কথা নয়। সেই বিচারকরা সিলেট সিমান্ত দিয়ে পার হতে নিয়েছিলেন, জনগন তাদের জঙ্গলের মধ্যে আবিষ্কার করলেন। তার অপকর্ম ছিল আকাশ্চুম্বী তাই সাহসের সাথে তিনি বাংলাদেশে থাকেননি।
এরকম অনেকে পালিয়েছেন। তারা পালিয়ে যাবার পর জনগন ধারণা করেছিল, এরা সাড়ে ১৫ বছর আমাদেরকে বড় জ্বালাতন করেছেন এখন তারা পালিয়ে গেছেন আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবো। কিন্তু না, তারা পালিয়ে গিয়েও দেশকে অস্থির করার জন্য মাঝেমধ্যে উস্কানিমূলক কর্মকান্ড করে থাকেন। সেরকম একটা উস্কানি দু একদিন আগে তারা দিয়েছিলেন। এদেশের হাজার হাজার মানুষ যারা খুন গুম হলো, রক্তাক্ত পঙ্গু হয়ে এখনো হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে সেসময় আপনারা উস্কানি দেন এটা কি বাংলাদেশের মুক্তিপাগল মানুষ সহ্য করবে? উস্কানির কারণে যত পরিবেশ সৃষ্টি হবে তার সমুদয় দায় উস্কানিদাতাদের নিতে হবে।
সাড়ে ১৫ বছরে দেশ থেকে বিদেশে ২৬ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। তারা দেশে থাকা অবস্থায় অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলতেন মনে হতো তারা এযুগের তাপসী রাবেয়া। মনে হতো তিনি হাসান বসরী। দেশ থেকে পালিয়ে যাবার পর আত্মগোপনে যাবার পর যেখানেই তাদের উপর হাত পড়ছে দুর্গন্ধ বেরিয়ে আসছে, অবৈধ সম্পদের খনি বের হয়ে আসছে।
সরকারের কাছে আমাদের স্পষ্ট দাবি, এরা এত বছরে যত টাকা জনগনের থেকে চুরি করে দেশে কিংবা বিদেশে পাচার করেছে সব উদ্ধার করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে হবে। সেই টাকায় সুষম উন্নয়ন হবে। আমরা কোন বৈষম্য চাইনা। এই নারায়ণগঞ্জ পুরো জেলাটাই হলো ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পার্ক। মহানগরের আমীর বলে গেলেন, এখানে কোন মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাই। কেন? ২৬ লক্ষ মানুষের এই নগরী, প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষের এই জেলা কেন বঞ্চিত হবে? আমরা দেখেছি কোন কোন জেলা মাত্র তিনটা উপজেলার জেলা, সেখানে ইউনিভার্সিটি আছে, মেডিকেল কলেজ আছে, উন্নততর স্পেশালাইজড হসপিটাল আছে, কারিগরি প্রতিষ্ঠান আছে, কৃষি ইউনিভার্সিটি আছে। তিন উপজেলার জেলায় যদি এটা হতে পারে ৪০ লক্ষ মানুষ কি অপরাধ করেছে যে তাদের এখানে হলোনা। যারা গডফাদাররা জমিদারি নিয়েছিলেন তারা কি করেছেন? তারা তাদের আপার কাছ থেকে এগুলি আদায় করেননি কেন? কারণ তাদের ধান্ধাবাজি ছিল জমিদারি টিকিয়ে রাখা, মানুষের উপর সন্ত্রাস করা এবং চাঁদাবাজি, লুণ্ঠন দখলদারি চালিয়ে যাওয়া। জনগনকে নিয়ে তাদের কোন পরিকল্পনা ছিলনা। এটা শুধু নারায়ণগঞ্জের না সারা দেশের দুর্ভাগ্য। আমরা এমন শিক্ষা আমাদের সন্তানদের দেব ধনী গরীব কোন বৈষম্য হবেনা। ধনীর সন্তান পিতার টাকায় আর গরীবের সন্তান সরকারের টাকায় লেখাপড়া করবে। কোন শিশু আর পথশিশু, এটা আর আমরা শুনতে চাইনা। যে শিশু এদেশে জন্ম নিয়েছে একে আমরা মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবো, লেখাপড়া শেষে যখন সন্তানরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হবে এসময় তাদের হাতে যখন সার্টিফিকেট আসবে তাদের হাতে কাজও চলে আসবে ইনশাআল্লাহ। কাউকে আর বেকারত্ব দেখতে হবেনা।
তিনি আরো বলেন, এমন দেশ হবে যেখানে কোন দুর্নীতি দুঃশাসন থাকবেনা। নারায়ণগঞ্জেও যদি চাঁদাবাজি দখলদারি হয়, অফিস আদালতে ঘুষ চলে, তাহলে কেন এতগুলো মানুষের জীবন গেল, কেন এত মানুষ পঙ্গু হলো, কেন এতগুলো রক্তের ফোটা ভাসলো? আমি বিনয়ের সাথে দল মত ধর্মের ঊর্ধে উঠে অনুরোধ করবো এই অপকর্মের সাথে যারাই জড়িত আছেন মেহেরবানি করে এই অপকর্মগুলো ছেড়ে দেন। এই অপকর্ম করলে এই শহীদদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। তাদের রক্তের সাথে অপমান করা হবে। ১৮ কোটি মানুষকে অপমান করা হবে। মানুষকে স্বস্তিতে বাঁচতে দেন।