শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫

|

চৈত্র ১৪ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

মাদকের বিরোধীতায় সকলের শত্রু শামীম, ঘটনাস্থলে না থেকেও অভিযুক্ত হয়ে বহিস্কার!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ২৩:২৬, ২১ মার্চ ২০২৫

মাদকের বিরোধীতায় সকলের শত্রু শামীম, ঘটনাস্থলে না থেকেও অভিযুক্ত হয়ে বহিস্কার!

প্রতীকী ছবি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চনপাড়া নাম শুনলেই আগে মানুষ মন্তব্য করতো এটি মাদকের স্বর্গরাজ্য। অনেকে চনপাড়াকে বস্তি হিসেবে অবহিত করতেন। বিগত ১৭ বছরে মাদকের হাটখ্যাট এই ইউনিয়নকে নিয়ে স্থানীয়দের নানা অভিযোগ থাকলেও কাজ হয়নি। 

স্থানীয় যুবদল নেতা যিনি ১৭ বছর এই মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে বার বার মামলা, হামলা গ্রেপ্তারের শিকার হলেও কখনো দলের বিরুদ্ধে যাননি। দলের জন্য কাজ করতে গিয়ে তার বাড়িতে বার বার হামলা হয়েছে, পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেয়া হয়েছে। বাড়ি থেকে পালিয়ে পালিয়ে রাজনীতি করা এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হলেও মাদক বিরোধীতা করা বন্ধ করেননি। সেই যুবদল নেতা রূপগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ককে তিনি যে দোষে দুষ্ট হন সেই দোষে বহিষ্কার করার ক্ষুব্দ স্থানীয়রা। 

জানা যায়, ৫ আগস্টে আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর স্থানীয় চনপাড়াবাসীকে নিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলেন শামীম। তার আন্দোলনে স্থানীয়রা যুক্ত হয়ে আওয়ামীলীগের প্রভাবে মাদকের সাথে জড়িতদের চনপাড়া থেকে বিতাড়িত করে মাদক দূর করেন। চনপাড়াকে বস্তি বাদ দিয়ে আধুনিক শহর হিসেবে ঘোষণা করেন। এতে তৃণমূলের মানুষ ও বিএনপি-যুবদলের নেতাকর্মীদের কাছে মাথার মুকুট হয়ে যান শামীম। তবে চক্ষুশূলে পরিণত হন মাদক ব্যবসায়ীদের। 

প্রকৃত ঘটনাঃ মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) দিবাগত রাতে চনপাড়া ১ নং ওয়ার্ড এলাকায় মাদক বিক্রেতা রবিনকে (আওয়ামীলীগ সময় থেকেই মাদক বিক্রি করতো) মাদক বিক্রিকালে বাধা দেয় ১ নং ওয়ার্ড যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন। এতে করে দুজনের মধ্যে তর্ক হলে শাহীনকে মাদক ব্যবসায়ীরা মারধর করে। পরে শাহীন চনপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মনির দেওয়ানকে ফোনে জানান মাদক বিক্রিতে বাধা দেয়ায় তার উপর হামলা হয়েছে। এতে ক্ষুব্দ হয়ে মনির ঘটনাস্থলে যায়। পরে মাদক ব্যবসায়ীরা মনিরকে দেখেই তাকে মারধর করে তার জামা কাপড় ছিড়ে ফেলে। এতে করে মনির ফিরে আসে। এতে করে যুবদলের নেতাকর্মীরা খবর পেয়ে ক্ষুব্দ হয়ে রবিনকে তুলে নিয়ে পুলিশে দিতে চাইলে পথিমধ্যে রবিনকে শেল্টারদাতা চনপাড়া স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা পরিচয় দানকারী রাব্বানি, করিম ও শাকিল তাদেরকে বাধা দেয় এবং তাদের সাথে সংঘর্ষ বাধে। পরে রাতভর এ সংঘর্ষ চলে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় হাসিব নামে একজন। তবে ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ইউনিয়নের ছিলেন না যুবদল নেতা শামীম। 

পরবর্তীতে বৃহস্পতিবার রূপগঞ্জ থানা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম মিয়াকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সমস্ত পদ থেকে বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল। যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এসময় পেশীশক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে সংঘাত সৃষ্টি করে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে শামীম মিয়াকে বহিষ্কার করার যৌথ সিদ্ধান্ত নেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন।

চনপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হারুনুর রশীদ মিয়াজি জানান, আমরা ঘটনার শুরু থেকে শামীমকে কোথায় দেখিনি। কেউ দেখেনি বলে জেনেছি। শামীম মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার সমসময়।

স্থানীয় বাসিন্দা শাকিল নামে একজন জানান, ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের এলাকায় এ ঘটনা হলেও আমরা বা কেউ শামীম সেখানে ছিল বলে দেখিনি, শুনিওনি। তবে যুবদলের নেতাকর্মীরা ছিল।

এদিকে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে স্বেচ্ছাসেবক দলের নাম আসা তিন নেতাদেরকেও বহিস্কার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।