নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব তীরে বন্দর থানার গঙ্গাকূল “ম” খন্ড মৌজায় শীতলক্ষ্যা নদীর জায়গায় নির্মিত যুবরাজ মার্কেটি অপসারণে মো. জাকির ওরফে জাকির শাহ পীরকে নোটিশ দেয়ার পরে ৬ ডিসেম্বর রোববার বিরোধপূর্ণ জমিতে সাইনবোর্ড সাটিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন (বিআইডব্লিউটিএ) নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ। ৩ দিনের মধ্যে নিজ খরচে ওই যুবরাজ মার্কেট অপসারণ করে না নেওয়া হলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালানো হবে বলে সাইনবোর্ডে উল্লেখ করা হয়। এর আগে ২৯ অক্টোবর রোববার যুগ্ম পরিচালক (বন্দর) শেখ মাসুদ কামাল স্বাক্ষরিত একটি চিঠির মাধ্যমে যুবরাজ মার্কেটের মালিক মো. জাকির ওরফে পীর জাকির শাহ বরাবর ওই নির্দেশনা দেয়া হয়। এর অনুলিপি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, নৌ পুলিশ সুপার, বন্দরের ইউএনও, বন্দরের এসিল্যান্ড, বন্দরের ওসি, নৌ পুলিশের ওসিকেও দেয়া হয়েছিল।
অবৈধ স্থাপনা অপসারণ/উচ্ছেদ নোটিশের সাইনবোর্ডে উল্লেখ করা হয়, মহামান্য হাইকোর্টে দায়েরকৃত রীট পিটিশন নং-৩৫০৩/২০০৯ এর নির্দেশনার আলোকে নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার গঙ্গাকূল “ম” খন্ড মৌজায় শীতলক্ষ্যা নদীর সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে। নদীর সীমানা চিহ্নিত করার পরে বিআইডব্লিউটিএ হতে উক্ত এলাকায় লাল নিশান এবং লাল মার্কা দেওয়া হয়। শীতলক্ষ্যা নদীর জায়গায় লাল নিশান ও মার্কা অতিক্রম করে অবৈধ এবং বেআইনীভাবে যুবরাজ মার্কেট নামে একটি পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে উক্ত ভবনের মালিক মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে রীট পিটিশন নং ১৫২৪৩/২০২০ মূলে স্থিতাবস্থার আদেশ লাভ করেন যাহা মহামান্য আপিল বিভাগে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক দায়েরকৃত সিপি নং ৫৪৩/২০২০ মূলে ০৮-০৩-২০২০ তারিখে স্থগিত হয়েছে। এমতাবস্থায় নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার গঙ্গাকূল “ম” খন্ড মৌজায় শীতলক্ষ্যা নদীর জায়গায় অবৈধভাবে নির্মিত “যুবরাজ মার্কেট” নামীয় পাকা স্থাপনাটি আগামী তিন (৩) দিনের মধ্যে মার্কেটটির মালিককে নিজ খরচে সম্পূর্ণরূপে অপসারণ করে তীরভূমি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হলো। অন্যথায় উক্ত স্থাপনা বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক উচ্ছেদ করা হবে এবং উক্ত উচ্ছেদের সমূদয় ব্যয় যুবরাজ মার্কেটের স্বত্বাধিকারীর নিকট থেকে আদায় করা হবে।
এর আগে প্রেরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে জেলা প্রশাসন, নারায়ণগঞ্জ, জরীপ অধিদপ্তর, বিআডব্লিউটিএ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তর সমন্বয়ে সিএস নকশা অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার উক্ত এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে। নদীর সীমানা চিহ্নিত করার পর গৃহীত জিপিএস অনুযায়ী বিআইডব্লিউটিএ হতে উক্ত এলাকায় লাল নিশান এবং লাল মার্কা দেয়া হয়। নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের নিয়ন্ত্রনাধীন বন্দর থানার গঙ্গাকূল “ম” খন্ড মৌজায় সাম্প্রতিককালে আপনি শীতলক্ষ্যা নদীর জায়গায় লাল নিশান ও মার্কা অতিক্রম করে অবৈধ এবং বেআইনীভাবে যুবরাজ মার্কেট নামে একটি পাকা মার্কেট নির্মাণ করেছেন। উক্ত নির্মাণ কাজ শুরুর প্রাক্কালে আপনাকে সরাসরি মহামান্য হাইকোর্টের আদেশটি অবহিত করা হয়েছে এবং এ অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। তারপর বিভিন্ন সময়ে বারণ করা স্বত্তেও বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ এর কারণে সরকার সরকার ঘোষিত লকডাউনের মধ্যে আপনি নির্মাণ কাজ চলমান রাখেন এবং নির্মাণ সম্পন্ন করেন। আপনার এরূপ কার্যক্রম সরকারী আদেশ লঙ্ঘনসহ সরাসরি মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ বরখেলাপ। এমতাবস্থয়, নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের নিয়ন্ত্রনাধীন নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার গঙ্গাকূল “ম” খন্ড মৌজায় শীতলক্ষ্যা নদীর জায়গায় নির্মিত অবৈধ যুবরাজ মার্কেট নামীয় পাকা স্থাপনাটি পত্র জারির সাত দিনের মধ্যে নিজ খরচে সম্পূর্ণরুপে অপসারণ করে তীরভূমি ও নদী পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হলো। এ নোটিশটি চূড়ান্ত নোটিশ হিসেবে বিবেচনা করার জন্য বলা হলো। পরবর্তিতে উক্ত স্থাপনা উচ্ছেদে আপনাকে আর কোনো প্রকার নোটিশ প্রদান করা হবে না। অন্যথায় উক্ত স্থাপনা উচ্ছেদের লক্ষ্যে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং উচ্ছেদের সমুদয় ব্যয় আপনার নিকট থেকে আদায় করা হবে। একই সঙ্গে মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ অবমাননায় আপনার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করা হবে।
উল্লেখ্য এর আগে ১০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব তীরে বন্দর ঘাট এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছিৈ বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ। ওই সময়ে বন্দরের গঙ্গাকুল মৌজায় পীর জাকির শাহের নির্মাণাধীন যুবরাজ মার্কেটের শতাধিক দোকানঘর উচ্ছেদ করতে গেলে বিআইডব্লিউটিএ অভিযানে বাধা প্রদান করে দখলদাররা। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডায় হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এসময় পীর জাকির শাহ এর কাছ থেকে দোকান ক্রয়কারী এক ব্যক্তি ভেকুর অপারেটরকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। তাদের মার্কেটে ভেকু দিয়ে ভাঙচুর করলে ভেকু অপারেটরকে হত্যা করে সে ফাঁসিতে ঝুলবে বলেও হুশিয়ারী দেয়। পরে পীর জাকির শাহের নিয়োজিত আইনজীবী হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ দেখালে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ পিছু হটে।
এরপর ১৫ নভেম্বর বন্দর একনং খেয়াঘাটস্থ ময়মনসিংহ পট্টি এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে বিশাল সমাবেশ করে বিআইডব্লিউটিএ’র প্রতি হুশিয়ারী দেন পীর জাকির শাহ। এছাড়া বর্তমান সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের লোকজন তার কাছের লোক বলেও বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তাদের প্রতি সাবধান বানী উচ্চারণ করেন তিনি। অথচ এই পীর জাকির শাহের বিরুদ্ধে শুধু বিআইডব্লিউটিএ’র জমিই নয় রেলওয়ের পুকুরও দখল ও ভরাটের অভিযোগ রয়েছে।
সেদিন বন্দর ১ নং খেয়াঘাটস্থ ময়মনসিংহ পট্টি এলাকায় বিআইডব্লিউটিএ'র অবৈধ উচ্ছেদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভায় সভাপতি'র বক্তব্যে জাকির শাহ বিআইডব্লিউটিএ'র কর্মকর্তাদের প্রতি হুংকার দেন। এসময় তিনি বলেন, বেহাইয়া ও বেশরম কিছু অফিসার আছে তারা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করে সরকারের বদনাম করার চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার মা। আমি আমার মায়ের কাছে যাব এবং সেখানে আমি আপনাদের কথা বলব। এদেশে কিছু মন্ত্রী ও কিছু এমপি আমার মুরিদান রয়েছে। আমাদের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ সাহেবের স্ত্রী রাশিদা বেগম ২০ বছর পূর্বে আমাকে বাবা ডেকেছে। এখানে আমার অনেক মুরিদানের জয়গা সম্পত্তী রয়েছে। সম্পদ রক্ষা করা ইমানী দায়িত্ব। এ আসনের সাবেক এমপি নাসিম ওসমান আমার ছেলে। সে আজ বেঁচে থাকলে এখানে আমাকে আজ আসতে হতোনা। অনেক পীর ফকিররা রাজনীতি করে আমি রাজনীতি করিনা। তিনি আরো বলেন, এখানে এসেছি সত্যটা বলার জন্য। বন্দর জন্মভূমি এই কারনে আমাকে এখানে আসতে হয়েছে। পাট মন্ত্রনালয় থেকে বন্দরে সাধারণ জনগণ সরকারকে টাকা পয়সা দিয়ে সাব কবলা দলিল মূলে সাব রেজিস্ট্রি মাধ্যমে উক্ত জমি ক্রয় করে । অথচ মাসুদ করিম নামে একজন লোক মানুষের ক্রয়কৃত সম্পত্তী ভাংচুর চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে। এবং কিছু স্থাপনা ভাঙ্গার চেষ্টা চালাচ্ছেন। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
প্রসঙ্গত ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারীতে নদীকে জীবন্ত সত্বা ঘোষণা করে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এরপর সিএস জরিপ অনুযায়ী নদীর সীমানা উদ্ধারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
নারায়ণগঞ্জ পোস্ট