ফাইল ছবি
হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে শেষ মুহূর্তে মন্দিরগুলোতে প্রতিমা তৈরি কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। দিন রাত পরিশ্রম করে মৃৎশিল্পীরা তাদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় কাদামাটি, খড়, বাঁশ, সুতলি ও বিভিন্ন রকম রং ও তুলি দিয়ে তৈরি করছেন একেকটি অসাধারণ সুন্দর প্রতিমা।
নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন মন্দির ও মন্ডপ প্রাঙ্গনে নানা আকার আর ঢংয়ের দুর্গা দেবীর মূর্তি বানানো হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সবমিলিয়ে ২১৩টি মন্ডপে হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী ৯ অক্টোবর বুধবার মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজা এবং ১৩ অক্টোবর রোববার বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুর্গাপূজা। এর আগে আগামী ২ অক্টোবর বুধবার মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষের শুরু।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে শহরের দেওভোগ আখড়া, পালপাড়া, উকিলপাড়া, সাহাপাড়া, আমলাপাড়া, নয়ামাটি, নিতাইগঞ্জের বলদেব জিউর আখড়া মন্দির ঘুরে দেখা গেছে, মন্দিরে কারিগররা ফুটিয়ে তুলছেন দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ-কার্তিক ও অসুরের প্রতিমা।
মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরীর কাজ। ইতি মধ্যেই খড় আর কাঁদামাটি দিয়ে শেষ হয়েছে প্রতিমা তৈরীর কাজ। এখন চলছে রং আর তুলি দিয়ে চলছে প্রতিমার সাজানোর কাজ। এছাড়াও প্রতিমা তৈরীর পাশাপাশি অন্যান্য মন্দিরের সাজসজ্জায় চলছে বিশেষ প্রস্তুতি।
প্রতিমা শিল্পীর কল্পনায় দেবী দুর্গার অনিন্দ্য সুন্দর রূপ দিতে সকাল থেকে শুরু করে দিন রাতভর চলছে প্রতিমা তৈরিরে কাজ। আর এই উৎসবকে সামনে রেখে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি যেন পুরোদমে এগিয়ে চলছে। তবে প্রতিমা নির্মাণের প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বেশি হওয়ায় লাভ কম হবে বলে আশঙ্কা কারিগরদের।
প্রতিমা শিল্পীরা বলেন, তাড়াতাড়ি কিভাবে কাজ নামানো যায় তাই আমরা রাতদিন পরিশ্রম করছি। সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। আমাদের লাভ হয় না।
মৃৎশিল্পী তারক নাথ বলেন, গত বছর পূজার প্রতিমার বাজেট ছিল ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এবছর তা অনেক কমে গেছে। আর আমাদের পরিশ্রম বেড়ে গেছে। এখন তারকাঁটা থেকে শুরু করে বাঁশ, কাঠ, সুতা, খড়ের দাম অনেক বাড়তি, তাই খরচ বেশি পড়ছে। লাভ না হলেও পেশা ধরে রেখেছি। আমরা সেই তুলনায় দুর্গা প্রতিমার মায়ের প্রণামী পাচ্ছি না।
তিনি আরও বলেন, এখন মাটির ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে এর পরে রংয়ের কাজ করা হবে। আশা করছি পুজোর ২দিন আগেই মন্ডবে মন্ডবে প্রতিমা পৌঁছে দেয়া হবে।
এদিকে আগামী ৯ অক্টোবর থেকে শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। তাই সময় ঘনিয়ে আসায় কাজের চাপ অনেকটাই বেড়ে গেছে, যার কারণে সারাদিন কাজ করার পরে রাতেও কাজ করতে হচ্ছে। তবে সবকিছুর দাম বেশি হওয়ায় এখন আর তেমন লাভ নেই। বহু বছর যাবত প্রতিমা তৈরী করে আসছি।
এবিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখণ সরকার শিপন বলেন, এবছর নারায়ণগঞ্জের ২১৩টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। সার্বিক পরিস্থিতি অন্তত সন্তোষজনক। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলামসহ সমস্ত দল আমাদের পাশে আসেন। আমরা উৎসব মুখর পরিবেশের মধ্যে দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন করবে বল আশাবাদী।
তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি মণ্ডপে মন্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরির প্রস্তুতি। এসময়ে প্রতিটি মন্দিরে কমিটির পক্ষ থেকে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবী সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। এছাড়াও প্রতিটি মন্ডপে মন্ডপে সিসি ক্যামেরা লাগানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
নিরাপত্তা বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব যেনো শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তাদের ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করতে পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অতীতেও যে পরিমাণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল তার চেয়ে বেশি আছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি পূজা মন্ডপে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়ন থাকবে। পূজা মন্ডপের বাইরে ও রাস্তায় পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্য, র্যাব, সেনাবাহিনীসহ সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে। আশা করছি প্রতি বছরের মতো এবারও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হবে।