শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

|

পৌষ ৬ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাতি পরিচয় পাওয়া কে এই জাকির খান?

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৮:৫৫, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাতি পরিচয় পাওয়া কে এই জাকির খান?

ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের এক সময়ের দোর্দন্ড প্রতাপশালী নেতা জাকির খানের বাবা দৌলত খান ছিলেন তৎকালীন টানবাজার পতিতালয়ের গডফাদার ছিলেন বলে আওয়ামীলীগ নেতারা দাবি করেন। সুত্রমতে, ১৯৮৯ সালে নাসিম ওসমানের (নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বর্তমান এমপি ও এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য) হাতে ধরে জাতীয় পার্টির ছাত্রসমাজে যোগ দিয়ে নারায়ণগঞ্জের ছাত্র রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন।

১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর জাকির খানের সঙ্গে নাসিম ওসমানের বিরোধ বাধে। পরে জাকির খান বিএনপি নেতা কামালউদ্দিন মৃধার নেতৃত্বে ১৯৯৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৫ সালে দেওভোগ এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে শহরের সোনার বাংলা মার্কেটের পেছনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে দুর্ধর্ষ হিসেবে শহরে পরিচিত পান জাকির খান।

১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের শেষ দিকে জাকির খান শহরের খাজা সুপার মার্কেটে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড পেয়ে জেলে যান। কিন্তু প্রেসিডেন্টের সাধারণ ক্ষমায় তিনি মুক্ত হন। সে সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মতিন চৌধুরীর নাতি হিসেবে শহরে পরিচিত হয়ে ওঠেন জাকির খান।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার ৭ মাসের মাথায় কাশীপুর বাংলাবাজার এলাকায় এক ঠিকাদারের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় দ্বিতীয় দফায় জাকির খানের ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয় এবং তিনি জেলে যান। আওয়ামী লীগের ৪ বছর জাকির খান থাকেন জেলে।

১৯৯৯ সালে স্বল্প সময়ের জন্য জেল থেকে বের হয়ে জাকির খান জেলা ছাত্রদলের সভাপতির পদটি পেয়ে যান। আওয়ামী লীগের শাসনামলের শেষ দিকে ২০০০ সালে শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ থেকে টানবাজার ও নিমতলী পতিতালয় উচ্ছেদ করলে জাকির খানের পরিবারের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙ্গে যায় বলে সেসময় খবর ছড়ায়। বিশাল গাড়ী বহর নিয়ে অস্ত্রের মহড়া শুরু করলে ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আবার কারাবন্দি হন তিনি। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরও প্রায় ৫ মাস তিনি জেলে থাকেন।

২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সাব্বির আলম খন্দকার খুন হওয়ার পর এ মামলার আসামি হওয়ায় তিনি নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে থাইল্যান্ডের সুকুমবিকে কয়েক কোটি টাকা দিয়ে ’গ্রেস’ নামে ৮তলা বিশিষ্ট একটি থ্রি-স্টার হোটেল কেনেন।

জাকির খানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৪টি হত্যাসহ তিন ডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে।

স্থানীয় বিএনপির এক সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সাবেক সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকারের কাউন্টারম্যান হিসেবে জাকির খানকে বিএনপির রাজনীতিতে পুনর্বাসনের চেষ্টা চালানো হয় জেলার সাবেক এমপি ও তার অনুসারীদের পক্ষ থেকে। এই গ্রুপটি মূলত তৈমুর আলমের প্রতিপক্ষ গ্রুপ হিসেবে পরিচিত।

২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর তৈমুর আলম খন্দকার জেলা বিএনপির সভাপতি হওয়ার পর স্থানীয় বিএনপির কর্তৃত্ব তার কাছে চলে যায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপ তাদের অবস্থান সুসংহত করতেই জাকির খানকে শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে বেছে নিয়েছিল। ওই গ্রুপের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল জেলা ও শহর বিএনপির কমিটিতে স্থান না পাওয়া বিতর্কিত কয়েকজন নেতা। এসব গ্রুপের মাধ্যমে সেসময় জাকির খান গোপনে ঢাকায় বিএনপির হাই কমান্ডের কয়েকজনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন বলেও জানা গেছে।

থাইল্যান্ডে হোটেল ব্যবসার মন্দাভাব থাকায় জাকির খান দেশে ফিরে আসতে চাইছিলেন অনেকদিন ধরেই। এ লক্ষ্যে দলের সকল কর্মসূচী ও জাতীয় দিবসগুলোতে দলের পক্ষে মিছিল ও শো ডাউন করে আসছিল জাকির খানের হাজারো লোকজন। তারা জাকির খানের বিশাল ছবি ও ব্যানার বহন করে কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে আসছিলেন।

প্রসঙ্গত, সাব্বির আলম খন্দকার ছিলেন দেশের গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার অ্যান্ড ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এর প্রতিষ্ঠাকালীন পরিচালক ও সাবেক সহ-সভাপতি। তিনি বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকারের ছোট ভাই।

তার অপর ভাই মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি।

আসছে শনিবার ১৮ ফেব্রুয়ারি সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলার ২০ তম বার্ষিকী। সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলায় ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি শহরের মাসদাইর এলাকায় নিজ বাড়ির অদূরে আততায়ীদের গুলিতে তিনি নিহত হন।

হত্যাকাণ্ডের পর তার বড় ভাই তৈমুর আলম বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনের তৎকালীন বিএনপি দলীয় এমপি গিয়াসউদ্দিনকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। দীর্ঘ প্রায় ৩৪ মাস তদন্ত শেষে সিআইডি ২০০৬ সালের ৮ জানুয়ারি আদালতে ৮ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন। এ চার্জশিটে মামলার প্রধান আসামি গিয়াস উদ্দিনকে মামলা থেকে বাদ দেওয়ায় মামলার বাদী তৈমুর আলম খন্দকার সিআইডির দেওয়া চার্জশিটের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৪ জানুয়ারি আদালতে নারাজি পিটিশন দাখিল করেন।

নারাজি পিটিশনে তৈমুর আলম বলেন, ‘গিয়াসউদ্দিনই সাব্বির আলম হত্যাকাণ্ডের মুল নায়ক। গিয়াসউদ্দিন ও তার সহযোগীদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা একটি গোঁজামিলের চার্জশিট দাখিল করেছেন। পরবর্তীতে আদালত মামলাটি পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন। ’

এর পর থেকে ৬ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ বিচারিক হাকিম আদালতে (ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট) মামলার শুনানি চলে আসছিল। গত ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে তৈমুর আলম খন্দকার আদালতে দাখিলকৃত না রাজি পিটিশনটি আবেদন করে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

নারাজি পিটিশন প্রত্যাহারের কারণে গিয়াসউদ্দিন এখন আর মামলায় অভিযুক্ত নেই। ফলে সিআইডি ২০০৬ সালের ৮ জানুয়ারি আদালতে যে ৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছেন তার উপর ভিত্তি করেই মামলাটি পরিচালিত হচ্ছে।

নারাজি পিটিশন প্রত্যাহারের মূল উদ্দেশ্য ছিল- মামলায় প্রধান আসামি করা নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিনকে বাঁচিয়ে দেওয়া। সেসময় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তৈমুরের পক্ষে গিয়াসউদ্দিন সর্বাত্মক কাজ করবে এমন শর্ত সাপেক্ষেই তৈমুর নারাজি পিটিশন প্রত্যাহার করে নেয়। অথচ হত্যাকাণ্ডের পর থেকে তৈমুর ও তার পরিবারের অভিযোগ করে আসছিল গিয়াসউদ্দিনই সাব্বির আলম হত্যাকাণ্ডের মুল নায়ক।