ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জে নির্বাচনের আগ মুহুর্তে দল যখন বিদেশিদের চাপে সে সময়ে শহরের প্রান কেন্দ্রে শামীম ওসমানের বিশাল জনসভাটি ছিল বছরের আলোচিত ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম। জনসভাকে কেন্দ্র করে আগেই লাখো লোক নিয়ে দেশি-বিদেশি সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঘণ্টা বাজানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি।
শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে এই জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
জনসভাকে কেন্দ্র করে দুপুর থেকেই নেতাকর্মীরা সভাস্থলে আসতে শুরু করেন। এসময় স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। গোটা শহর ছিল উৎসবমুখর।
প্রধান অতিথি উপস্থিত হওয়ার আগেই নারায়ণগঞ্জ নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কের ২ নম্বর রেলগেট এলাকার আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে ডিআইটি হয়ে শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ার গোল চত্বর পর্যন্ত পুরো এলাকায় জনস্রোত নেমে আসে।
জনসভাকে কেন্দ্র করে জেলার সদর, বন্দর ফতুল্লা, সোনারগাঁও, আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জ-সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী মিছিল মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দিতে আসে।
বিকেল ৪টায় সমাবেশের প্রধান অতিথি স্বররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে নিয়ে ভীড় ঠেলে রিক্সায় করে এসে মঞ্চে ওঠেন শামীম ওসমান।
এসয়ম মঞ্চে উঠেই শামীম ওসমান সমাবেশস্থলে সমবেত লোকসমাগমের উদ্দেশে স্লোগান দেন―‘বীর বাঙালি ঐক্য গড়ো, বাংলাদেশ রক্ষা করো; দেশ বাঁচাতে দরকার, শেখ হাসিনা সরকার; জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’ ১০-১৫ মিনিট ধরে চলা লাখো কণ্ঠের স্লোগানে প্রকম্পিত হয় গোটা নগরী।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, আজকে নারায়ণগঞ্জের এ জনসভায় সভাপতিত্ব করছেন আপনাদের শামীম ওসমান। আজ শামীমের ডাকে আপনারা যেভাবে এসেছেন, এখানে লাখো জনতার ঢল নেমেছে। এই লাখো মানুষের ঢল প্রমাণ করে নারায়ণগঞ্জের মানুষ বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে কতটা ভালোবাসে।
তিনি বলেন, শামীম ওসমানের পিতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। তার সন্তানরা আজ নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শামীম ওসমানের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ আজ আওয়ামী লীগের শক্তিশালী ঘাঁটি। ঢাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে শামীম ওসমান হাজারো নেতাকর্মী নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। আজকে আপনাদের এই উপস্থিতি এটা প্রমাণ করে, নারায়ণগঞ্জ তথা পুরো বাংলাদেশে শেখ হাসিনা একটি আস্থার নাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নাই। শেখ হাসিনার বিকল্প শুধুই শেখ হাসিনা।
সভাপতির বক্তব্যে শামীম ওসমান বলেন, ২১ বার শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমাদের স্বপ্নটাকে বাঁচিয়ে রাখুন, তিনিই আমাদের স্বপ্ন। অক্টোবর নাগাদ ওরা মানচিত্রে থাবা দেবে-ক্ষমতায় আসার জন্য নয়, বাংলাদেশকে ধ্বংস করার জন্য। যারা বাংলাদেশকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে চায়, তাদের বলতে চাই-আমরা কারও পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াইনি। বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। শামীম ওসমান বলেন, ১৯৮১ সালে পার্টি অফিসে ঢুকে মনির ভাইকে হত্যা করা হয়েছিল। আমরা বিচার পাইনি। নিজের এ হাত দিয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরে পঞ্চাশটা লাশ দাফন করেছি। অনেককেই কবরস্থানে নিয়ে যেতে পারিনি। শেখ হাসিনা যখন বাংলাদেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন সে সময় দেশি-বিদেশিরা তাকে হত্যার পরিকল্পনা করছে।
শামীম ওসমান আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জে অনেকে আওয়ামী লীগ সাজতে চান, কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে নামেন না। মোশতাক বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আমাদের বাসায় ফোন করেছিলেন। আমার মা সেদিন খুনি মোশতাককে বলেছিলেন, সে (শামীম ওসমানের বাবা) যদি আপনার মন্ত্রিসভায় যোগ দেয়, প্রথমে চেষ্টা করব তাকে হত্যা করতে, নয়তো নিজে আÍহত্যা করব। আমি সেটার সাক্ষী। মনসুর আলী যে রুমে ছিলেন, আমার বাবাও সেখানে ছিলেন। তাকে অজু পর্যন্ত করতে দেয়নি। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা দেশে ফিরে দুহাত তুলে কাঁদছিলেন। বলেছিলেন-আমার বাবা-মাকে যেখানে মেরেছে, সেখানে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে চাই। তারা সেখানে নফল নামাজ পড়তে দেয়নি। যারা আমাদের জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছে তাদের সঙ্গে গণতন্ত্র চর্চা করতে পারব না। আমরা আমাদের বাংলাদেশকে বাঁচাতে চাই।