ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে বছরজুড়েই বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের বার বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বছরজুড়েই এসকল সংঘর্ষের ঘটনা আলোচিত ছিল।
১১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে আড়াইহাজারের সাতগ্রাম ইউনিয়নের পাঁচরুখী এলাকার ঢাকা সিলেট মহাসড়কে বিএনপির পদযাত্রায় পুলিশ ও নেতাকর্মীদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে সাতগ্রাম ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি নাহিদ মোল্লা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
আড়াইহাজার পৌরসভা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ জানান, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ গুলি ছুড়লে আমাদের ছাত্রদল নেতা নাহিদের শরীরে ছিটা গুলি এসে লাগে।
২৯ জুলাই রাজধানীর প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন বিএনপির ২২ নেতাকর্মী। এসময় বিএনপির পাঁচ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হন। ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম টিটুর চোখে গুলি লাগে। টিটুর গুলি লাগার ঘটনা দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও উঠে আসে।
জানা যায়, বিএনপি নেতাকর্মীরা অবস্থান কর্মসূচি পালনের লক্ষ্যে বিভিন্ন অলিগলিতে জড়ো হচ্ছিলেন। এর মধ্যে মহানগর বিএনপির নেতাদের সঙ্গে জেলা বিএনপির একাংশ মহাসড়কে উঠতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের ধাক্কাধাক্কি শুরু হলে পুলিশ বেপরোয়া লাঠিচার্জ করে ও বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এতে জেলা বিএনপির অন্তত ২২ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হন।
সংঘর্ষের ঘটনায় ৩০ জুলাই সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মুমিনুল হক বাদী হয়ে ২২ জনের নাম উল্লেখ করে এ মামলা দায়ের করেন।
৩১ অক্টোবর আড়াইহাজারে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধের সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। তখন যুবলীগের কর্মীরা ঘটনাস্থলে এলে তাদেরও ধাওয়া দেন বিএনপির কর্মীরা।
অবরোধের সমর্থনে পাঁচরুখী এলাকায় মহাসড়কে মিছিল বের করে বিএনপি। দলের কেন্দ্রীয় সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের নেতৃত্বে মিছিলে শত শত নেতা-কর্মী অংশ নেন। মিছিল থেকে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে অবরোধ সফলে নানা স্লোগান দেন তারা। মিছিলটি মহাসড়কে কিছুক্ষণ অবস্থান করার পর পুলিশ বাধা দিলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ টিয়াস গ্যাস ও গুলি ছোড়ে। এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের ঘিরে ফেলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এসময় তুমুল সংঘর্ষ হয় দুপক্ষের মধ্যে।
সংঘর্ষ চলাকালে পাঁচটি বাস ভাঙচুর করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এক পর্যায়ে যুবলীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটাসহ এলে তাদেরও ধাওয়া দেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
সংঘর্ষে পুলিশের পাঁচ সদস্য, বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী ও আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীও আহত হন। এসময় নুরুল হক নামের এক কনস্টেবল লাঠির আঘাতে মারাত্মক আহত হন। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
১৯ আগস্ট কাঁচপুরে কয়েক দফায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
জানা যায়, বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলায়-জেলায় শনিবার ছিল পদযাত্রা কর্মসূচি। বিকেল ৩টা থেকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দিপু, জেলা বিএনপির সেক্রেটারি গোলাম ফারুক খোকন, আড়াইহাজারের মাহমুদুর রহমান সুমন, সিদ্ধিরগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে কাঁচপুরে জড়ো হতে থাকেন।
তবে আগে থেকে মোতায়েন করা পুলিশ সদস্যরা নেতাকর্মীদের রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। বিকেল সাড়ে ৩টায় এ নিয়ে তাদের মধ্যে তর্কের এক পর্যায়ে পুলিশ বেধড়ক লাঠিচার্জ শুরু করলে নেতাকর্মীরা রাস্তা থেকে সরে যায়। পরে বিএনপি নেতাকর্মীরা আবারো লাঠিসোঁটা নিয়ে জড়ো হয়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়তে থাকলে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। ওই সময়ে পুলিশ টিয়ার সেল ও ফাঁকা রাবার বুলেট ছুড়ে। এতে বিএনপি নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে চলে যায়।
এ সময় পুলিশের গুলিতে আহত হন যুবদল কর্মী আলামিন মোল্লা।
২১ আগস্ট কাঁচপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় বিএনপির ১১৪ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৭০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ।