নারায়ণগঞ্জে শেখ হাসিনার সর্বশেষ সমাবেশ
নারায়ণগঞ্জে ২০২৪ সাল ছিল ঘটনাবহুল একটি বছর। দেশের রাজনীতি ওলট-পালট করে দেয়া এই বছরের শুরু থেকেই নারায়ণগঞ্জ ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বছরের শুরুতেই নারায়ণগঞ্জে সমাবেশ করেন শেখ হাসিনা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার সর্বশেষ সমাবেশটি ছিল নারায়ণগঞ্জে।
৪ জানুয়ারি শহরের ওসমানী স্টেডিয়ামে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সম্ভবত নারায়ণগঞ্জে এটিই ছিল শেখ হাসিনার শেষ সমাবেশ। এদিকে বছরের শেষ মাস ডিসেম্বর মাসেও জেলার থানাগুলোতে একাধিক হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলা হয় তার বিরুদ্ধে।
সমাবেশে নারায়ণগঞ্জের চারটি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ক্ষমতাসীন দলের প্রধান শেখ হাসিনার সমাবেশ হলেও সেদিন নারায়ণগঞ্জ শহরে এক ধরনের নীরবতা দেখা গিয়েছিল। মূলত সমস্ত রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করায় নির্বাচন নিয়ে জনসাধারণের মাঝে খুব একটা উৎসাহ দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকলেও সমাবেশে আশানুরূপ জনসমাগম দেখা যায়নি।
এদিকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার আগে সারা দেশে বিএনপির অন্তত ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। নারায়ণগঞ্জেও বিএনপির বহু নেতাকর্মী আটক হন, বাকিরা ছিলেন আত্মগোপনে। বিরোধী দলগুলোর উপর এমন নিপীড়নের ফলে জনসাধারণের মাঝে চাপা ক্ষোভ দেখা গেছে সেসময়।
এদিকে শেখ হাসিনার আগমনকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া এলাকা থেকে শুরু করে ইসদাইর এলাকা পর্যন্ত সমস্ত দোকানপাট ও ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। সমাবেশস্থলের আশেপাশের বিল্ডিং গুলোর জানালা ও বারান্দায় ছিল প্রশাসনের পাহাড়া।
শেখ হাসিনার জনসভাকে ঘিরে পুরো শহর ব্যানার ফেস্টুন দিয়ে সাজান আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সমাবেশে অংশ নিয়ে সেদিন শেখ হাসিনা বলেন, এখন মানুষ সেবা পাচ্ছে, বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আর বিএনপি সেখানে কী করে, আপনারা দেখেছেন। ২৮ অক্টোবর তারা কী ভয়ংকরভাবে পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছে। পুলিশকে ফেলে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে, পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে অ্যাম্বুলেন্স জ্বালিয়ে দিয়েছে, রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স যাচ্ছে, সে অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমণ করেছে এবং সেখানে অনেক পুলিশ সদস্যকে আহত করেছে। ঠিক ২০১৩ সালে যেভাবে হত্যা করেছিল, ঠিক একইভাবে আবারো করেছে।
তিনি আরও বলেন, ঠিক প্যালেস্টাইনে (ফিলিস্তিন) ইসরায়েল যেভাবে হামলা করছে, হাসপাতালের ওপর বম্বিং (বোমাবর্ষণ) করছে, ঠিক বিএনপিও সেই ইসরায়েলকে অনুসরণ করে আজ পুলিশ হাসপাতালে আক্রমণ, অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমণ করছে। ওদের মনুষ্যত্ব বলে কিছু নেই। আজকে নির্বাচনে তারা আসেনি, সেটি তাদের ইচ্ছা। কিন্তু মানুষের ভোটের অধিকারে বাধা দেওয়া কখনোই দেশের জনগণ মেনে নেবে না। এ অধিকার মানুষের অধিকার। সুতরাং ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ইনশাআল্লাহ হবে।
এছাড়াও সেদিন সমাবেশ থেকে নৌকা মার্কায় ভোট চান আইভী, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাইসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা।
এদিকে এসকল বক্তব্যের পর একই বছরে মানুষ হত্যায় একের পর এক অভিযোগে মামলা হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। জেলার বিভিন্ন থানায় এসব মামলায় তিনি ও তার দলের নেতাকর্মীরা হত্যাকান্ডে অংশ নেন বলে অভিযোগ উঠে।