বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

|

মাঘ ২২ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

সালতামামি ২০২৪

না.গঞ্জে আ.লীগের নেতাকর্মীদের গুলিতে শিশু রিয়া গোপের মৃত্যু ছিল আলোচিত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৫:৪২, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

না.গঞ্জে আ.লীগের নেতাকর্মীদের গুলিতে শিশু রিয়া গোপের মৃত্যু ছিল আলোচিত

ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরেধী ছাত্র আন্দোলনে বাড়ির ছাদে থেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে ছয় বছরের শিশু রিয়া গোপ মৃত্যবরণ করেন। আন্দোলনের সময় ঘটনাটি বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করেছিল।

আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ১৯ জুলাই বিকেলে শহরের নয়ামাটি এলাকায় বাসার ছাদে খেলছিলেন শিশু রিয়া গোপ। এসময় একটি গুলি এসে রিয়া গোপের মাথায় লাগে। পরবর্তীতে তাকে দ্রুত উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পাঁচদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যান রিয়া গোপ।

এদিকে নিজের একমাত্র সন্তানের এমন করুণ মৃত্যুতে পালপ্রায় হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা।

নয়ামাটি এলাকায় পাঁচতলা দ্বীনবন্ধু মার্কেটের পঞ্চম তলায় পরিবার নিয়ে থাকেন দীপক কুমার গোপ। দীপক কুমার গোপ ও বিউটি ঘোষ দম্পতির একমাত্র সন্তান ছিল রিয়া। বিয়ের পাঁচ বছর পর এ দম্পতির ঘর আলো করে আসে রিয়া। দেখতে পুতুলের মতো সুন্দর। এ বছরই রিয়া নয়ামাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দেন রিয়ার বাবা দীপক কুমার গোপ। বাড়ির সামনে খেলাধুলার জায়গা নেই। সেদিনও অন্যান্য দিনের মত ছাদের খেলছিল রিয়া। হঠাৎ ভবনের নিচে ও চারপাশে হৈচৈ, চিৎকার চেঁচামেচি আর গুলির শব্দ শুনে দৌড়ে ছাদে যান মেয়েকে ঘরে আনতে। মেয়েকে কোলে তুলে নিতেই বুলেট এসে বিদ্ধ হয় রিয়ার মাথায়। মুহূর্তেই ঢলে পড়ে বাবার কোলে।

রক্তে ভিজে যায় পুরে শরীর। দ্রুত রিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে। চিকিৎসক অবস্থার অবনতি দেখে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। রাতেই মাথায় অস্ত্রোপচার হয়। সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে বলে জানান চিকিৎসকরা।

রিয়াকে রাখা হয় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। বলা হয়, ৭২ ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাবে না। অস্ত্রোপচারের পর শনিবার পার হয়। রোববার ও সোমবার আইসিইউতে একটু একটু করে আঙুল নাড়ছিল রিয়া। স্বজনদের বুকে আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু বুধবার সকালের দিকে রিয়ার সে নড়াচড়াও থেমে যায়। সবাইকে কাঁদিয়ে রিয়া চলে যায় না-ফেরার দেশে।

নারায়ণগঞ্জে আন্দোলনে ১৯ জুলাই ছিল ঘটনাবহুল দিন। এদিন ছিল শুক্রবার। জুমার নামাজের পর সেসময় শহরে পুলিশের উপস্থিতি ছিলনা। শহরে আন্দোলনকারীদের দমাতে মাঠে নামেন শামীম ওসমান। এসময় তার সাথে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের শতশত নেতাকর্মী ছিলেন। প্রত্যেকের হাতেই ছিল অত্যাধুনিক অস্ত্র।

আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করতে করতে শহরের ডিআইটি এলাকা হয়ে নয়ামাটির দিক পর্যন্ত যান শামীম ওসমান ও তার অনুসারীরা। সন্ধ্যার আগে পুলিশ মাঠে ছিল না। শামীম ওসমান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর গুলি শেষ হয়ে আসলে একসময় তারা পিছু হটে। পরবর্তীতে মাঠে নামে পুলিশ।

ধারণা করা হয়, এদিন সশস্ত্র হামলার গুলিতেই রিয়া গোপের মৃত্যু হয়েছিল।