বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫

|

মাঘ ১৬ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

সালতামামি ২০২৪

যেভাবে ঢাকাকে দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে ভূমিকা রেখেছিল না.গঞ্জ বিএনপি

প্রকাশিত: ১৬:৫৯, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১৭:২৯, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

যেভাবে ঢাকাকে দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে ভূমিকা রেখেছিল না.গঞ্জ বিএনপি

ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক কেন্দ্রিক আন্দোলনে জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন

নারায়ণগঞ্জে ২০২৪ সালের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থান। এই গণ-অভ্যুত্থানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক কেন্দ্রীক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা। এই মহাসড়কটির দখল নেয়ার মাধ্যমেই মূলত শেখ হাসিনার পতন নিশ্চিত হয়।

আন্দোলনের প্রথম ভাগে প্রায় দশ দিন এই মহাসড়ক পুরপুরি বন্ধ ছিল। ছাত্র জনতার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা এই এলাকায় গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।

বিএনপি ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ইসলামিক দলগুলো ও মাদ্রাসা ছাত্ররা এই আন্দোলনে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে। আন্দোলনটি সফল হওয়ার পেছনে টার্নিং পয়েন্ট ছিল যাত্রাবাড়ি থেকে শুরু করে কাঁচপুর পর্যন্ত এগারো কিলোমিটার রাস্তা নিজেদের দখলে রাখা। এর ফলে দক্ষিণ বঙ্গের সাথে ঢাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

এর আগে বিগত কয়েকবছর যাবৎ ঢাকার প্রবেশপথ গুলোতে শক্তিবৃদ্ধি করতে শুরু করে বিএনপি। ঢাকার প্রবেশপথ গুলোতে একের পর এক সমাবেশ ও পদযাত্রা করে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে থাকে বিএনপি। বিএনপি নেতারা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাতে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করাই ছিল একমাত্র পথ।

ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক কেন্দ্রিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন। সাইনবোর্ড থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত পুরো অঞ্চলকে বেশ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে নেতাকর্মীদের দায়িত্ব দেন খোকন। আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে মাঠে থেকে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন এই নেতা।

সাইনবোর্ড থেকে চিটাগাং রোডের প্রতিটি বিএনপির মিছিলে অগ্রভাগে দেখা গেছে ফতুল্লা থানা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রুহুল আমিন শিকদারকে। 

মহাসড়ক কেন্দ্রিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি ও জেলা ছাত্রদলের তৎকালীন সভাপতি নাহিদ হাসান ভূঁইয়া। ছাত্রদল ও যুবদল নেতাকর্মীদের সাথে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমন্বয় করে পুরে এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন রনি ও নাহিদ।

এর আগে ২০২২ সালের শেষার্ধ থেকেই ঢাকার অন্যতম প্রবেশপথ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দখলে রাখতে মরিয়া ছিল দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দুটি দলেরই শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এই মহাসড়ককে ঘিরে সেসময় বিশাল জনসমাবেশ করে। জনসভায় রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই প্রবেশপথ নিজেদের দখলে রাখতে স্থানীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তখন থেকেই সরকার পতনের একদফা দাবীতে রাজধানী কেন্দ্রীক কর্মসূচির দিকে আগায় বিএনপি। এর ফলে তখন থেকেই আন্দোলনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ঢাকার প্রধান প্রবেশপথ ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কটি।

২০২৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পাশেই ফতুল্লার সাইনবোর্ডে বিশাল জনসভা করে বিএনপি। সমাবেশ থেকে ঢাকা দখলে নিতে নেতাকর্মীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেছিলেন, দেশকে যদি বাঁচাতে চান তাহলে আওয়ামী লীগকে আর ক্ষমতায় আসতে দেয়া যাবে না। আমরা লগি-বৈঠা নিয়ে নামবো না। তবে আজ নারায়ণগঞ্জবাসীকে বলব আগামীতে আমরা তারিখ দেব। সাইনবোর্ডে দিয়ে মানুষ শুধু হেঁটে হেঁটে ঢাকা শহরে ঢুকবে।

আওয়ামী লীগ নাকি সন্ত্রাস করে না। লগি বৈঠা দিয়ে নিরীহ মানুষকে পিটিয়ে মেরে তারা নৃত্য করেছিল। তারা নাকি মানবতার দল। আওয়ামী লীগ হল একটি সন্ত্রাসী দল। বিএনপি গণতন্ত্র ভালবাসে বলেই বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে।

এর আগে গত ২০২৩ সালের ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশপথে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে সালাম বলেন, আমরা একটি ট্রায়াল দিয়েছিলাম। সেদিন পুলিশ র্যাব বিজিবি চাপাতি লীগ হোন্ডা বাহিনী নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল। চাপাতি, গুন্ডা বাহিনীকে ফেস করতে রাজী আছি৷ এখনও সময় আছে। আওয়ামী লীগ যদি জোর করে নির্বাচন করতে চায় পুলিশকে বলব আপনারা জনগণের টাকায় বেতন নেন। জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন না।

২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন সংঘাতে রুপ নিলে ঢাকার প্রবেশপথে শক্তি প্রয়োগ করে বিএনপি। শিক্ষার্থীদের সাথে সমন্বয় করে ঢাকাকে সফলভাবে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে ছাত্র-জনতা, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।