ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জে ২০২৪ সালের শুরুটা জেলা ও মহানগর বিএনপির জন্য ছিল চ্যালেঞ্জিং। বছরের শুরুর পাঁচ মাস আত্মগোপনে থেকেই কাটাতে হয়েছে দলটির নেতাকর্মীদের। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে একদফার আন্দোলনে নামার পর সরকারের চরম দমন পীড়নে বছরের শুরুটা দুঃস্বপ্নের মতই ছিল বিএনপির জন্য। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে চরম নিপীড়নের শিকার হতে হয় দলটির নেতাকর্মীদের। তবে পাঁচ আগষ্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। নারায়ণগঞ্জ জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় বিএনপি নেতারা।
বছরের শুরুটা নানামুখী চাপে থাকলেও শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বর্তমানে দেশ গঠনের কাজে প্রধান শক্তি হিসেবে সামনে এসেছে বিএনপি। এরই পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে জন্য দল গোছাতে শুরু করেছেন নারায়ণগঞ্জের নেতারা। পাশাপাশি দেশ সংস্কারে বিএনপির ৩১ দফা দাবী জনগণের কাছে পৌছাতে ঘরে ঘরে যাচ্ছেন দলটির নেতারা। সব মিলিয়ে বছরের শেষ ভাগে এসে ফুরফুরে মেজাজে আছেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতারা।
বছরের শুরুতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নানা ধরনের কর্মসূচি হাতে নেয় দলটি। তারই অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশে সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, গণমিছিল, গণসংযোগ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন ধরনের গণমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে দলটি। ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা হিসেবে নারায়ণগঞ্জের রাজপথ এসময় ছিল উত্তাল। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বাহিনী মোকাবিলা করে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হন দলটির নেতাকর্মীরা। এতে আহত হন হাজার হাজার নেতাকর্মী। দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরও কারাবরণ করতে হয়। এসব কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় দলটিকে।
তবে এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ হয় ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে পতিত স্বৈরাচারী সরকার পতনের মধ্য দিয়ে। মূলত এরপর থেকেই ১৭ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ফুরফুরে অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। যেখানে দলটির নেতাকর্মীদের আন্দোলন কর্মসূচিতে ঠিকভাবে পাওয়া যেত না, সেখানে এখন নেতাকর্মীদের দখলে নারায়ণগঞ্জের রাজপথ থেকে শুরু করে অলিগলি পর্যন্ত।
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। দলীয় নেতাকর্মীদের রেখে ফ্যাসিস্ট তকমা পাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যান ভারতে। এতে রাতারাতি পাল্টে যায় বিএনপির ভাগ্য। ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতির আদেশে মুক্তি পান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। একই সঙ্গে কারাগার থেকে মুক্তি পান দলটির কয়েক হাজার নেতাকর্মী। বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে দীর্ঘ সময় বিদেশে অবস্থান নেওয়া দলটির নেতাকর্মীরাও দেশে ফিরতে থাকেন। দলটির পছন্দের লোকজন দায়িত্ব পান রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে। বলা যায়, আগামী দিনে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে বিএনপি। সব মিলিয়ে অভূতপূর্ব একটি বছর পার করছে দলটি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি এখন সংগঠন গুছিয়ে নিয়ে এসে নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। তবে বিগত দিনে দেওয়া ৩১ দফার রূপরেখা যে কথার কথা নয়, তা প্রমাণ করতে হবে কাজের মাধ্যমে। তাদের সংস্কার প্রস্তাবগুলো নতুন আঙ্গিকে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে হবে।
এদিকে দ্বাদশ সংসদের একতরফা নির্বাচনের ছয় মাসের মাথায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনে বদলে যায় দৃশ্যপট। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারামুক্ত হন। রাজনৈতিক মামলায় দলের কারাবন্দি সর্বস্তরের নেতাকর্মীরাও বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান। এঘটনার পর থেকেই নারায়ণগঞ্জে চাঙ্গা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠছে। এতে দলটি আবার জনপ্রিয়তা হারানোর চ্যালেঞ্জে পড়েছে। যদিও দলটির হাইকমান্ড কঠোর অবস্থান নিয়ে ইতিমধ্যে বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত থাকায় অনেককেই বহিষ্কার করেছে। বিতর্ক থাকায় বিলুপ্ত করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটিও।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে লাভবান বিএনপিঃ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যাওয়ার পরে দুটি রাজনৈতিক দল এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরে বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ স্বয়ংক্রিয়ভাবে আওয়ামী লীগ বিরোধীদের দখলে চলে গেছে। ৫ আগস্টের পরে বেশ দ্রুততার সঙ্গে খালেদা জিয়াকে মুক্তির আদেশে স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি। এরপর বিএনপির বেশ কিছু সিনিয়র নেতা জেল থেকে দ্রুত ছাড়া পান। অনেকে মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন।