ফাইল ছবি
বাংলাদেশের ঐতিহ্যের কথা বললে, ইতিহাসের কথা বললে মসলিনকে বাদ দেওয়ার কোনো উপায় নেই। নারায়ণগঞ্জের যে অঞ্চলে মসলিন তৈরি হতো সেই সোনারগাঁয়ে এখন প্রাচীনকালের মিহি মসলিন কাপড়ের উত্তরাধিকারী হিসেবে জামদানি শাড়ি তৈরি হয়।
শুধু সোনারগাঁয়ে নয় পাশের উপজেলা রূপগঞ্জেও এ জামদানি শাড়ি তৈরি হয়।
জামদানি তৈরিতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও ও রূপগঞ্জে অন্তত ৩শতাধিক তাঁতী রয়েছেন। আর এ তাঁতীদের সরলতার সুযোগ নিয়ে একটি সংগঠনের কয়েকজন প্রতারক ইতিহাস ঐতিহ্যের জামদানি ধ্বংসে নানাভাবে প্রতারণা করে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
তাঁতীদের দাবি বাংলাদেশ উইভার্স প্রডাক্ট অ্যান্ড ম্যানু. বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন গরীব অসহায় ও দুঃস্থ তাঁতীদের কল্যাণার্থে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ও সিলেটের বিভিন্ন স্থানে প্রায় এক যুগ সময় ধরে মেলা করে আসছে। এসব মেলায় বিদেশি পণ্য ছাড়া কোনো গরীব অসহায় ও দুঃস্থ তাঁতীদের জামদানি শাড়ির দোকান বরাদ্ধ দেওয়া হয় না। শুধু তাই নয় আর্থিকভাবেও কোনো সহযোগিতা করা হয় না তাঁতীদের। এছাড়া সংগঠনের অধিকাংশ নেতাদের দাবি আয় ব্যয়ের হিসাবতো দূরের কথা মেলার লভ্যাংশ কোনো সময় সংগঠনের ফান্ডে রাখা হয়নি।
তাঁতীদের অভিযোগ, গরীব অসহায় ও দুঃস্থ তাঁতীদের নাম ব্যবহার করে চক্রটি র্দীঘদিন ধরে জামদানিকে আড়ালে রেখে বিদেশি পণ্য দিয়ে মেলা সাজিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করছেন। ওই চক্রটির কারণে দেশের মসলিন কাপড়ের উত্তরাধিকারী হিসেবে পরিচিত জামদানি শাড়ির ঐতিহ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তাঁতীরা জানান, উইভার্স সংগঠনের কাউকে কিছু না জানিয়ে গোপনে সংগঠনের সভাপতি সালাউদ্দিন মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে চাষাঢ়া জিয়া হলের সামনে খালি মাঠে রমজানের এক মাসের জন্য গরীব অসহায় ও দুঃস্থ তাঁতীদের কল্যাণার্থে তাঁতবস্ত্র, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলার অনুমোদন নিয়েছেন।
তারা আরো জানান, ওই মেলায় ২০টি স্টলের মধ্যে মিয়াকো ইলেক্ট্রনিক, আলিফ সুজ, ডিজাইন ইলেক্ট্রনিক্স, ঢাকা ফ্যাশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দোকান রয়েছে। এরমধ্যে মেলার প্রবেশ পথে নামে মাত্র একটি জামদানি শাড়ির দোকান রয়েছে। এ মেলাটি যাদের জন্য আয়োজন করা হয়েছে সেই গরীব অসহায় ও দুঃস্থ তাঁতীদের কারো জন্য এক হাত জায়গাও বরাদ্ধ দেওয়া হয়নি। তার কারণ হলো- জামদানি তাঁতীরা মেলার আয়োজক সালাউদ্দিনের চাহিদা মতো দোকান ভাড়ার টাকা দিতে পারেন না। তবে যারা দোকান ভাড়া ১-১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে পারেন তাদেরই তাঁতীদের কল্যাণের নামে দেওয়া মেলায় স্থান হয়।
তাঁতীরা তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, জেলা প্রশাসন দ্রুত প্রতারক সালাউদ্দিনকে আইনের আওতায় আনবেন এবং জামদানির ঐতিহ্য ধরে রাখতে চাষাঢ়া জিয়া হলের মেলাটি উচ্ছেদ করে তাঁতীদের সম্মান রক্ষা করবেন।
উইভার্সের সভাপতি সালাউদ্দিন জানান, বাংলাদেশ উইভার্স প্রডাক্ট অ্যান্ড ম্যানু, বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন সংগঠনের কার্যকরী কমিটি ২১ সদস্যের। বিভিন্ন স্থানে গরীব অসহায় ও দুঃস্থ তাঁতীদের কল্যাণে সংগঠনের ব্যানারে মেলার আয়োজন করি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো সংগঠনের কেউ মেলার আয়োজন করতে কোনো রকম সহযোগিতা করেন না। মেলা শুরু করলে উড়ে এসে জুড়ে বসেন। আর শুধু জামদানি শাড়ির দোকান দিলে মেলায় লাভ বলতে কিছুই থাকে না। এখন শাড়ি কেউ কেনে না। তাই নানা ধরনের আইটের দোকান রাখতে হয়।
তিনি জানান, করোনার আগে চাষাঢ়া জিয়া হলে মেলা করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ওই সময় জেলা প্রশাসক নানা জনের অভিযোগে মেলা উচ্ছেদ করে দিয়েছে। এবছর সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।
তিনি আরো বলেন, ১৯৯৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর উইভার্স সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ওই সময় থেকে এ সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছি। বর্তমানে আমাদের সংগঠনে প্রায় ২৫০জন সদস্য রয়েছেন। সদস্যদের তেমন কোনো সহযোগিতা না পাওয়ায় সংগঠনের ফান্ডে ১০টাকাও জমা রাখতে পারিনি।
উইভার্সের সিনিয়র সহ-সভাপতি মজিবুর রহমান বলেন, এক সময় সালাউদ্দিন রাস্তায় হেঁটে কাপড় বিক্রি করতেন। বর্তমানে সে কোটিপতি। ৪-৫টা বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে জমি ক্রয় করেছেন তিনি। এছাড়াও একটি টেক্সটাইল মিলও ভাড়া নিয়ে চালাচ্ছেন। এসবই গরীব অসহায় ও দুঃস্থ তাঁতীদের কল্যাণের নামে হাতিয়ে নেওয়া টাকায় গড়েছেন।
জামদানি তাঁতী আউয়ুবুর রহমান বলেন, গরীব তাঁতীদের কল্যাণের নামে সালাউদ্দিন নিজের পকেট ভারী করছেন। তিনি শুধু তাঁতীদের ক্ষতি করছেন না, তিনি জামদানিরও ক্ষতি করছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের নেজারত শাখার নাজির কামরুল ইসলাম জানান, তাঁতীদের কল্যাণে জিয়া হলের খালি মাঠে মেলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কোনো টাকার বিনিময়ে নয়। এ মেলায় কোনো বিদেশি পণ্য বিক্রি করতে পারবে না। এখানে শুধু তাঁতীরাই তাদের তাঁতবস্ত্র প্রদর্শন ও বিক্রি করবেন। আয়োজক যদি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে প্রতারণা করে থাকে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।