বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

|

অগ্রাহায়ণ ৬ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

আদমজী জুট মিল বন্ধের ২০ বছর আজ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ২৩:৫৭, ৩০ জুন ২০২২

আদমজী জুট মিল বন্ধের ২০ বছর আজ

ফাইল ছবি

আজ (৩০ জুন) আদমজী জুট মিল বন্ধের ২০তম বছর। এশিয়ার বৃহত্তম জুট মিল আদমজী তৎকালীন বিএনপি জোট সরকার চিরতরে বন্ধ করে দেন। ফলে এ মিলের ৩৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে ২০০৬ সালের ৬ মার্চে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আদমজী ইপিজেডের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সেই থেকেই আদমজী ইপিজেডের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে আদমজী ইপিজেডে এপ্রিল ২০২২ পর্যন্ত ৫৯ হাজার ৫৮২ জন নারী-পুরুষ শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। এদের মধ্যে কর্মরত নারী হচ্ছেন ৩৮ হাজার ৫৯৮ জন। আদমজী ইপিজেড প্রতিষ্ঠার সময় থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১৬ বছরে মোট ৬ হাজার ৭১০ দশমিক ৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্যসামগ্রী রপ্তানী করা হয়েছে। দিন দিন শ্রমিকদের সংখ্যাও বাড়ছে।

রাজধানী ঢাকার জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ১৫ কিমি পূর্বদিকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীনগরে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে আদমজী ইপিজেডের অবস্থান। ২৯২ দশমিক ৬২ একর জমির উপর স্থাপিত এইপিজেডের শিল্প প্লটের সংখ্যা ২৭৩ টি। যার অধিকাংশ প্লটই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, প্ল্যান মাফিক ইপিজেড স্থাপন ও দক্ষ জনশক্তি আদমজী ইপিজেডের সাফল্যের মূল কারণ। এই ইপিজেডের অবস্থান এমন এক জায়গায় যেখান থেকে রেল, নৌ ও আকাশ পথের যোগাযোগ ব্যবস্থা সুবিধাজনক। উড়াল সেতুর কারণে ঢাকার সাথে যোগাযোগ করা যায় অনায়েসে। তাছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক কাঁচপুর ব্রিজ পর্যন্ত আটলেন ও পর থেকে ফোরলেন মহাসড়ক হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে পোশাক আমদানী-রপ্তানী করাটাও অনেকটা সহজ। আদমজী ইপিজেডের সর্বমোট ২৭৩ টি শিল্প প্লটের মধ্যে বর্তমানে ৫০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে রয়েছে এবং ৯টি শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণাধীন বা উৎপাদনে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। মোট ৫০ টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাংলাদেশী (সি-টাইপ) শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৪টি। নির্মাণাধীন রয়েছে ২টি। সম্পূর্ণ বিদেশী মালিকানাধীন (এ-টাইপ) শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৫টি। নির্মাণাধীন রয়েছে ৪টি। যৌথ মালিকানাধীন (বি-টাইপ) প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১১টি। বাস্তবায়নাধীন রয়েছে ৩টি শিল্প প্রতিষ্ঠান। আগামী ৩ মাসের মধ্যে চীনা মালিকানাধীন চার্মিণ ট্রীম এন্ড প্যাকেজিং (বিডি) লিঃ (ঈঐঅজগওঘএ ঞজওগ ্ চঅঈকঅএওঘএ (ইউ) খঞউ) নামক একটি প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদনে যাবে। প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগের পরিমাণ ২ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইতোমধ্যে তারা নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আদমজী ইপিজেডে রেমি হোল্ডিংস লিমিটেডের মতো বিশ্বের শীর্ষ পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানার অবস্থান রয়েছে।

বর্তমানে আদমজী ইপিজেডে গার্মেন্টস, গার্মেন্টস এক্সেসরিজ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, জুতা, গাড়ির সিট ট্রিম কভার, লেবেল, সোয়েটার, মেটাল পণ্য, জুয়েলারি, ওপিসি ড্রাম, কেমিক্যাল এন্ড ফার্টিলাইজার, নিটিং এন্ড টেক্সটাইল পণ্য ইত্যাদি পণ্য উৎপাদিত হয়। স্বাগতিক বাংলাদেশসহ যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, জাপান, মরিসাস, সিঙ্গাপুর, চীন, কানাডা, স্পেন, জার্মানি, হংকং (চীন), মালয়শিয়া, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, ইউক্রেন এবং রোমানিয়ার বিনিয়োগকারীগণ বিনিয়োগ করেছে পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা আদমজী ইপিজেডে। আদমজী ইপিজেড প্রতিষ্ঠার পর ২০০৫-০৬ অর্থবছরে কর্মসংস্থান হয়েছিলো মাত্র ১ হাজার ৬২৫ জন শ্রমিকের। এপ্রিল ২০২২ পর্যন্ত আদমজী ইপিজেডে কর্মরত রয়েছেন ৫৯ হাজার ৫৮২ জন শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তা। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে কর্মরত মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৬৬ ভাগই নারী। ইপিজেড সূত্রে জানায়, গত (২০২০-২১) অর্থবছরে ৭০৪ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্যসামগ্রী রপ্তানী করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি থেকে। প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল  পর্যন্ত মোট ৬ হাজার ৭১০ দশমিক ৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্যসামগ্রী রপ্তানী করা হয়েছে।

আদমজী ইপিজেডটি একসময় ছিল পৃথিবীর অন্যতম বড় পাটকল। যা আদমজী জুট মিলস নামে পরিচিত ছিল। আদমজী জুট মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপুল সংখ্যক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন। এলাকাটিকে আবারও শিল্পমুখর করে তোলার জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়া জুট মিলের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয় আদমজী ইপিজেড। স্বাধীনতার পর থেকেই নারায়ণগঞ্জসহ আদমজী এলাকা হোসিয়ারি, পাট ও পাটজাত শিল্প, প্লাস্টিক ও মেটাল শিল্পের জন্য সুখ্যাতি রয়েছে। আদমজী ইপিজেড একটি শিল্পবান্ধব এলাকায় অবস্থিত যেখানে পণ্য তৈরির জন্য অনেক এক্সেসরিজ স্থানীয় এলাকা থেকেই আমদানী করা হয়। উপরন্তু শিল্প এলাকা হওয়ার কারণে শ্রমিক পাওয়া যায় সহজেই এবং দক্ষ শ্রমিক সহজলভ্যতা আছে। যেহেতু এখানে এক সময় জুট ফ্যাক্টরি ছিল তাই আমরা এখানে অন্যান্য রপ্তানীযোগ্য পণ্যের পাশাপাশি ফিউশন জুট পণ্যকে প্রাধান্য দিয়ে কারখানাকে উৎসাহিত করছি। ইপিজেডের কারণে আদমজীর ঐতিহ্যবাহী ওই শ্রম জনপদ কয়েক বছরের ব্যবধানে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে পেতে শুরু করে। হোসিয়ারি, পাট ও পাটজাত শিল্পে একসময় পুরুষরাই কাজ করত। কিন্তু আদমজী ইপিজেড হওয়ার ফলে এখানে নারীরা ব্যাপকভাবে কাজের সুযোগ পাচ্ছে। ইপিজেডের কারখানাগুলোতে নারীদের অধিকসংখ্যক অংশগ্রহণ নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখছে।

বাংলাদেশ রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের  (বেপজা) জিএম নাজমা বিনতে আলমগীর (গণসংযোগ বিভাগ) জানান, আদমজী ইপিজেডে রেমি হোল্ডিংস লিমিটেডের মতো বিশ্বের শীর্ষ পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা নির্মাণের জন্য অন্যান্য প্রতিষ্ঠানদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বান্ধব শিল্প জোন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বেপজা কাজ করে যাচ্ছে। আমরা মনে করি শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধাগুলোকে যদি গুরুত্ব দেয়া হয় তাহলে তা প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের পেছনে কাজ করে। তাই শুধু বিনিয়োগ, রপ্তানি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি নয় ইপিজেডে শ্রমিকদের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধাগুলোকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করা হয়। বেতন-ভাতার পাশাপাশি ইপিজেডে কর্মরত শ্রমিকদের যাতায়াত, দুপুরের খাবার, চিকিৎসার উন্নত ব্যবস্থা, দিবাযতœ কেন্দ্র সুবিধা রয়েছে। শ্রমিক-মালিক-ব্যবস্থাপনার ঐকতান ইপিজেডের অন্যতম চালিকাশক্তি।