ফড়িং
ফড়িং ওডোনাটা বর্গের অন্তর্গত এপিপ্রোকটা উপ-বর্গের, আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে ইনফ্রাঅর্ডার এনিসোপ্টেরার একটি পতঙ্গ। ফড়িংয়ের বৃহৎ যৌগিক চোখ, দুই জোড়া শক্তিশালী ও স্বচ্ছ পাখা এবং দীর্ঘায়িত শরীর দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত।
বসে থাকার সময় এদের পাখা অনুভূমিক এবং শরীরের সঙ্গে সমকোণে থাকে। ফড়িংয়ের অন্যান্য পতঙ্গের মতো ছয়টি পা থাকলেও এরা হাঁটতে পারে না, এদের পা কাঁটাযুক্ত এবং ডালপালায় বসার উপযোগী। ফড়িংয়ের মাথা বড় এবং ইচ্ছেমতো ঘোরানো যায়।
ফড়িং মশা এবং অন্যান্য ছোট-ছোট পোকামাকড় যেমন- মাছি, মৌমাছি, পিঁপড়া, প্রজাপতি ইত্যাদি খেকো গুরুত্বপূর্ণ শিকারিদের একজন। এদের সাধারণত পুকুর, হ্রদ, ঝর্ণা এবং জলাভূমির আশেপাশে পাওয়া যায়। কারণ এদের লার্ভা, যা কিনা নিম্ফ হিসেবে পরিচিত হল জলজ।
নিম্ফ আক্রান্ত হলে ব্যথা-উদ্রেককারী কামড় বসাতে পারে। সেক্ষেত্রে দংশিত স্থানটি ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত। না হলে তা ফোস্কার আকার ধারণ করে রোগসংক্রমণ করতে পারে।
একটি ঘাসফড়িংয়ের জীবনকাল হয়ে থাকে ৬ মাস। একটি ফড়িং একই সময়ে সামনে এবং পিছনে দেখতে পারে। যা অন্যান্য প্রাণী সহজে পারেনা। এই গঙ্গাফড়িং ডাইনোসরের যুগ থেকে এখনও বিদ্যমান রয়েছে। যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিবর্তনের মাধ্যমে আজকের ছোট গঙ্গা ফড়িং। এই গঙ্গাফড়িং একটি ভিন্ন দুনিয়া দেখতে পায় তার চোখের মাধ্যমে। আমরা সাধারণ কিছু আলো দেখতে পারি। কিন্তু একটি ফড়িং অতিবেগুনি রশ্মি পর্যন্ত দেখতে পারে। আমরা যা দেখতে পাইনা।
ফড়িং নামের ছোট পতঙ্গটির রয়েছে অতি প্রাচীন ইতিহাস। পৃথিবীর বুকে ডাইনোসরদের পদচারণার অনেক আগে থেকেই আকাশে উড়ে বেড়িয়েছে ফড়িং। প্রায় ৩০০ মিলিয়নের বেশি বছর ধরে পৃথিবীতে ফড়িংদের বসবাস। সময়ের সঙ্গে পরিবেশের পরিবর্তনে, বিবর্তনের ধারায় একসময়ের সুবিশাল পতঙ্গ ফড়িং আজকে পরিণত হয়েছে ছোট পতঙ্গে। কার্বনিফেরাস যুগে ফিরে গেলে দেখা যাবে, ফড়িংদের পূর্বপুরুষরা ছিল পতঙ্গদের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতঙ্গ। এই যুগে পাওয়া যেত পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পতঙ্গগুলো। সুপ্রাচীন গ্রিফেনফ্লাই হলো পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পতঙ্গ। যাদের বিবেচনা করা হয় ফড়িংয়ের পূর্বপুরুষ হিসেবে।
গ্রিফেনফ্লাইগুলোর পাখার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের দূরত্ব ছিল ৭১ সেন্টিমিটার ও উইং স্প্যান ছিলো ২৮ ইঞ্চি। কার্বনিফেরাস যুগে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ ছিল ৩০% এরও বেশি, ক্ষেত্র বিশেষে এই পরিমাণ প্রায় ৫০% পর্যন্তও ছিল। মনে করা হয়, বাতাসে অক্সিজেনের এই উপস্থিতি পতঙ্গগুলোর সুবিশাল আকারের অন্যতম কারণ ছিল।