মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল ২০২৫

|

চৈত্র ১৬ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

নারায়ণগঞ্জের যেসব স্থানে যানজট-ভোগান্তির শঙ্কা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১১:৪৮, ২৪ মার্চ ২০২৫

নারায়ণগঞ্জের যেসব স্থানে যানজট-ভোগান্তির শঙ্কা

সংগৃহীত

ঈদুল ফিতর দুয়ারে কড়া নাড়ছে। ৯ দিনের ছুটি ঘোষণার পর মানুষ গ্রামের বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। তবে দুর্র্ভোগ মাড়িয়ে সড়কপথে হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন বাড়ি ফিরছেন। দুটি মহাসড়কে উন্নয়ন কাজ চলায়, সড়কে হাট-বাজার বসানো এবং কম গতির গাড়ি চলাচলের ফলে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। যানবাহনের চাপ আরও বেড়ে গেলে তীব্র যানজট সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের দুই থেকে তিন দিন আগে কয়েকটি পয়েন্টে তীব্র যানজট হতে পারে। ঢাকা-উত্তরবঙ্গ ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে উন্নয়ন কাজ চলছে। এ কারণে তীব্র যানজটের শঙ্কা রয়েছে। অন্যসব রুটের বেশ কয়েকটি পয়েন্টেও যানজটে নাকাল হতে পারেন যাত্রীরা। সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম বিভাগের ৯টি জেলায় মানুষ চলাচল করে। এ মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ থেকে নরসিংদী পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে হাট-বাজার থাকায় চরম বিশৃঙ্খলা হয়। এরমধ্যে চার লেনের কাজ চলমান থাকায় কোথাও কোথাও সড়ক সরু হয়ে পড়েছে। আবার খানাখন্দও সৃষ্টি হয়েছে। আর উত্তরবঙ্গের যাত্রীরা ঢাকা থেকে বের হতেই গাবতলী, আমিন বাজার, বাইপাইল এলাকায় যানজটের শিকার হয়। 

নারায়ণগঞ্জের যেসব স্থানে যানজট-ভোগান্তির শঙ্কা: ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে প্রায় ২২ কিলোমিটারের মধ্যে ছয়টি স্থান এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের ২১ কিলোমিটারের মধ্যে সাতটি স্থানে যানজটের শঙ্কা রয়েছে। মেঘনা টোল প্লাজার দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে দৈনিক ১৮ থেকে ২২ হাজার যানবাহন চলাচল করে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ২৫ থেকে ২৮ হাজার যানবাহন চলে। তবে ঈদের সময় যানবাহনের সংখ্যা অর্ধলাখ ছাড়িয়ে যায়। এতে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ২১ কিলোমিটার সড়কে সাইনবোর্ড মোড়, মৌচাক বাসস্ট্যান্ড, ১০ তলা বিল্ডিংয়ের দুই পাশের সার্ভিস লেন, চিটাগাং রোডের শিমরাইল মোড়, কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ড, মদনপুর ও মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর বাস স্ট্যান্ড, তারাব বিশ্বরোডের গোল চত্বর, রূপসী বাস স্ট্যান্ড, বরপা, গার্মেন্টসের মোড় ও গাউছিয়া স্ট্যান্ডে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। হানিফ পরিবহণের সুপার ভাইজার সানাউল­াহ জানান, ঈদ এলে রাস্তায় অনেক গাড়ি বেড়ে যায়। যাত্রী উঠানামা করায় রাস্তা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে, এজন্য যানজট বেশি হয়। সিদ্ধিরগঞ্জের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী আনোয়ার হোসেন মাসুম বলেন, বাস স্ট্যান্ডের দুপাশে শত শত অবৈধ দোকানের কারণে যানজট সৃষ্টি হয়।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াহিদ মোরশেদ জানান, আমরা ইতোমধ্যে তৎপর হয়েছি। টহলও বাড়ানো হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ অংশে এবার মানুষকে যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হবে না। অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। সব উচ্ছেদ করা হবে। নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রহিম জানান, মেঘনা টোল প্লাজায় ১২টা বুথ বসানো হয়েছে। তিনি বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও হকাররা আবারও বসে যায়। অভিযান অব্যাহত রেখেছি। 

১২ হটস্পটে দুই শতাধিক রোভার স্কাউট: কুমিল্লা ব্যুরো জানায়, ঈদযাত্রায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ১২টি পয়েন্টকে হটস্পট হিসাবে চিহ্নিত করেছে হাইওয়ে পুলিশ। যান চলাচল নিরবচ্ছিন্ন রাখতে এসব পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য ছাড়াও ২০০ রোভার স্কাউটস সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। রোভার স্কাউট কুমিল্লা জেলার সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন লিটন জানান, হাইওয়েতে দায়িত্ব পাওয়া স্কাউট সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ, সড়ক ও জনপদ বিভাগ ও বিআরটিএ। ২৫ মার্চ থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত কাজ করবেন তারা। 

ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে দুর্ঘটনার শঙ্কা : যুগান্তরের টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, ঢাকার সঙ্গে সড়কপথে উত্তরবঙ্গের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়ক। এ মহাসড়ক দিয়ে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ২৪ জেলার যানবাহন চলাচল করে। ঈদে এ মহাসড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গের লাখ লাখ মানুষ যাতায়াত করেন। কিন্তু ঈদযাত্রায় সড়কের এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত চারলেন প্রকল্পের দুই লেন খুলে দেওয়ায় দুর্ঘটনার শঙ্কা করা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গগামী পরিবহণের চালক মোসলেম উদ্দিন বলেন, সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় এবারও মহাসড়কে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। যমুনা সেতু-ঢাকা মহাসড়কে ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মহাসড়ককে চারটি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। লিংক রোডগুলোতে বাঁশকল বসানো হয়েছে। মহাসড়কে সাড়ে সাতশ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি টাঙ্গাইল শ্রমিক ফেডারেশন স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করবে।

যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল জানান, সাধারণত প্রতিদিন যমুনা সেতু দিয়ে গড়ে ১৮ থেকে ২০ হাজার যানবাহন পারাপার হয়। ঈদযাত্রায় তা বেড়ে দ্বিগুণ বা তারও বেশি যানবাহন পারাপার হয়। তিনি বলেন, এবার সেতুর দুই প্রান্তের ৯টি করে বুথ দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হবে। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের জন্য দুটি করে আলাদা বুথ থাকবে। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, যানজট নিরসনে টাঙ্গাইলের অংশে ৬৫ কিলোমিটার সড়ক সাড়ে সাতশ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া মোবাইল টিম কাজ করবে। এবার মহাসড়কে যানজটের দুর্ভোগ অনেকাংশে কম হবে বলে তিনি আশা করেন।

আজ থেকে ট্রেনে ঈদযাত্রা শুরু, চলবে বিশেষ ট্রেন: কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন যুগান্তরকে জানান, সোমবার থেকে ট্রেনে ঈদযাত্রা শুরু হবে। এবারও অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণে ১০টি ঈদ স্পেশাল ট্রেন চালানো হচ্ছে। এছাড়া আন্তঃনগর ট্রেনের শুধু শোভন সিট ও শোভন চেয়ারের আসন সংখ্যার বিপরীতে ২৫ শতাংশ আসনবিহীন টিকিট বিক্রি করা হবে। আসনবিহীন টিকিট শুধু ট্রেন ছাড়ার ২ ঘণ্টা আগে বিক্রি করা হবে। এ টিকিটে এসি চেয়ার, প্রথম শ্রেণি ও কেবিন কোচে ভ্রমণ করা যাবে না। ১০টি বিশেষ ট্রেনের মধ্যে ঢাকা থেকে দেওয়ানগঞ্জ, চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর, ভৈরববাজার থেকে কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ, গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে পার্বতীপুর পথে চলাচল করবে। ঈদ উপলক্ষ্যে আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর সঙ্গে ৪৪টি নতুন কোচ যুক্ত করা হয়েছে।