নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজিতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা পিতার দাপটে দুই ভাই তৈরি করেছে দুই 'কিশোর গ্যাং' গ্রুপ। এলাকার প্রভাবশালী পরিবারের ছেলেদের এই দুই 'কিশোর গ্যাং' গ্রুপের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে না সাধারণ মানুষ। এতে স্থানীয়দের মধ্যে একধরণের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১ ও ২ নং ওয়ার্ডের মিজমিজি পশ্চিম পাড়া, মিজমিজি দক্ষিণ পাড়া, মিজমিজি কালু হাজী, ধনু হাজী, পাইনাদী নতুন মহল্লাসহ আশেপাশের এলাকার সাধারণ মানুষদের আতংকের নাম 'টেনশন গ্রুপ' ও 'মাফিয়া গ্রুপ' ।
সিদ্ধিরগঞ্জের স্বেচ্ছাসেবক লীগ পিতা শফিকুল শফিকের প্রভাব খাটিয়ে তার দুই ছেলে তৈরি করেছে এই দুই গ্রুপ। শফিকুল শফিকের বড়ছেলে রাইসুল ইসলাম সীমান্তের নেতৃত্বে 'টেনশন গ্রুপ' এবং ছোটছেলে তাহসিন ইসলাম সীমনের নেতৃত্বে 'মাফিয়া গ্রুপ' এলাকায় প্রচুর বিশৃঙ্খলা করছে।
সীমান্তের নেতৃত্বে টেনশন গ্রুপের সদস্যরা হচ্ছে- সীমান্তের অন্যতম সহযোগী মঈন, সৌরভ, আবির, শাওন, মাইনুদ্দিন ও শয়ন। অন্যদিকে সীমনের নেতৃত্বে মাফিয়া গ্রুপের সদস্যরা হচ্ছে- সিমনের অন্যতম সহযোগী ও আলমগীরের ছেলে বিজয়, ইরফাদ, আল-আমীন, শাওন, জয়, রাকিব, জীবন, খাইরুল, সাব্বির ও ফাহিম। এই দুই গ্রুপের বেশিরভাগ সদস্যদেরই নিজস্ব মোটরসাইকেল রয়েছে যা দিয়ে তারা এলাকায় নানা অপকর্ম করে থাকে।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, এই দুই কিশোর গ্যাং গ্রুপ সদস্যদের অনেকের অভিভাবক প্রভাবশালী ও এলাকায় পরিচিত মুখ। আবার অনেকে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাই তারা অপরাধ করলেও কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পাচ্ছে না। এছাড়া এলাকার সাধারণ মানুষ আইনের আশ্রয় নিতেও ভয় পান। বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ধরা পড়লেও জামিনে বের হয়ে ফের অপরাধে জড়াচ্ছে। ইভটিজিং থেকে শুরু করে মাদক বিক্রি, মাদক সেবন, চুরি, ছিনতাই, অপহরণ করার সাথেও এলাকায় এই দুই গ্রুপের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
এদিকে প্রায়ই এই দুই কিশোর গ্যাং গ্রুপের কবলে পড়ে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে অনেকেই। অনেকেই তাদের ভয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ কিংবা কথা বলতেও সাহস পান না। এলাকাবাসির অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাকের ডগায় এসব অপর্কম হলেও অনেক সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে এসব কিশোরেরা। এর কারণ হিসেবে দেখা যায় রাজনৈতিক ছত্রছায়া, এলাকার কথিত বড় ভাইদের অনুচর হিসেবে সক্রিয় থাকছে এসব উঠতি বয়সি বিপদে যাওয়া তরুণরা।
স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, এই দুই গ্রুপের সদস্যদের কারণে তারা সব সময় আতঙ্কে থাকে। এরা বিভিন্ন মামলার আসামি হয়েও এলাকায় দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রশাসনের কাছে তাদের অনুরোধ, এইসব কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে অতি শীগ্রই যেনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মশিউর রহমান জানান, পুলিশ সব সময় এরকম অপরাধীদের বিরুদ্ধে তৎপর রয়েছে। এছাড়া যদি কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয় অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য যে, সর্বশেষ গত ২২ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) মাদক সেবনে ও মাদক ব্যবসায় বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি দক্ষিন পাড়া এলাকায় 'টেনশন গ্রুপ' কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিল। এ ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয় যার প্রধান আসামি ছিল টেনশন গ্রুপের প্রধান সীমান্ত। তবে সীমান্ত কোনো অদৃশ্য কারনে এখনো গ্রেফতার হয় নি। এছাড়াও সীমান্তর বিরুদ্ধে মিজমিজি পশ্চিম পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে পিটানোর অভিযোগও রয়েছে ।
নারায়ণগঞ্জ পোস্ট