
ফাইল ছবি
আধো আধো বোল সবে শিশুটির মুখে ফুটেছে। মায়ের মুখ সে চেনা শুরু করেছে কয়েক মাস ধরে। তবে সেই চেনা মুখই হঠাৎ অচেনা হয়ে উঠেছে যেন ৮ মাস বয়সী সিজান আহমেদের। গর্ভধারিণী মায়ের বিরুদ্ধে যে তার হাত-পা ভেঙে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ১৩ মার্চ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় ঘটে এই নির্মম ঘটনা। দুই হাত ও পায়ে প্লাস্টার নিয়ে তীব্র ব্যথায় প্রায়ই কেঁদে উঠছে সিজান।
এ ঘটনায় গতকাল সোমবার বিকেলে সোনারগাঁ থানায় অভিযোগ দিয়েছেন সিজানের বাবা আশরাফুল ইসলাম। তাঁর বাড়ি উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের আন্দারমানিক গ্রামে। একই ইউনিয়নের নয়াপুরে অবস্থিত কংক্রিটের বৈদ্যুতিক খুঁটি তৈরির কারখানা কনফিডেন্সের শ্রমিক তিনি।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, পাঁচ বছর আগে আশরাফুল জামপুর ইউনিয়নের শেখেরহাট গ্রামে বিয়ে করেন। তাঁর দুই ছেলে। চার বছর বয়সী বড় ছেলেটির নাম সামির আহমেদ। ছোট্ট সিজান আহমেদের বয়স সবে আট মাস। পারিবারিক কলহের জেরে ১৩ মার্চ সকালে সিজানের দুই হাত ও পা ভেঙে দেন মা। পরে তিনি বাবার বাড়ি চলে যান।
স্বজনরা জানান, শিশুটিকে ঘটনার দিনই মদনপুরের বারাকা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে প্লাস্টার করার পর বাড়িতে আনা হয়। সিজানের বাঁ হাতের কাঁধ, ডান হাতের কনুই ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ভেঙে দেওয়া হয়েছে বাঁ পায়ের হাঁটু থেকেও। মায়ের অনুপস্থিতিতে সিজানকে প্যাকেটজাত কেনা দুধ খাওয়াতে হচ্ছে।
সোমবার বাড়িতে দেখা যায়, হাত-পায়ে প্লাস্টার নিয়ে শুয়ে আছে অবুঝ শিশুটি। তার বাবা আশরাফুল ইসলাম কান্নাজড়িত চোখে সন্তানের পাশে বসে আছেন। আশরাফুলের ভাষ্য, ছোটখাটো যে কোনো বিষয় নিয়ে তর্কাতর্কি হলেই তাঁর দিকে তেড়ে আসত স্ত্রী। কয়েকবার দা-বটি নিয়েও আক্রমণ করেছে। এমনকি আশরাফুলের মাকেও মারধর করেছে।
তিনি বলেন, দুই সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে এতদিন কিছুই বলেননি। বিভিন্ন সময়ে রাতের বেলা তাঁর স্ত্রী ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেন। কয়েক ঘণ্টা পর ফিরে আসতেন। যেদিন বাইরে যেতেন, সেদিনই কোনো না কোনো অঘটন ঘটাতেন শিশুদের মা।
সাদিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাজি সেলিম সরকার বলেন, ‘শিশুটির বাবা আমার কাছে এ ঘটনার বিচার চাইতে রোববার এসেছিলেন। শিশুটির অবস্থা দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। এমন মায়ের কথা জীবনে প্রথম শুনলাম। শিশুটির বাবাকে থানা পুলিশের সহায়তা নিতে পরামর্শ দিয়েছি।’
সোনারগাঁ থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল বারী বলেন, মায়ের নির্যাতনের শিকার শিশুর বাবা অভিযোগ দিয়েছেন। শিশুটির প্রতি অমানবিক আচরণ করা হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।