শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

|

পৌষ ৬ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

প্রেসিডেন্ট রাইসি-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করল ইরান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১২:২০, ২০ মে ২০২৪

প্রেসিডেন্ট রাইসি-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করল ইরান

ফাইল ছবি

ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটিতে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ানের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে দেশটির আধাসরকারি সংবাদমাধ্যম মেহের নিউজ এজেন্সি।

সোমবার (২০ মে) স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ২১ মিনিটে তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

এর আগে, ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাব্দুল্লাহিয়ানসহ আরও সাতজনের সন্ধান পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল। পরে জানানো হয় বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটিতে ভ্রমণকারীদের মধ্যে কেউ জীবিত থাকার সম্ভাবনা নেই।

হেলিকপ্টারটিতে থাকা ইব্রাহিম রাইসি, হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান, ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর মালেক রহমাতি এবং পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলে-হাশেমসহ অন্য যাত্রীরা নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, রোববার (১৯ মে) ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। বহরে মোট তিনটি হেলিকপ্টার ছিল। তার মধ্যে দুইটি নিরাপদে ফিরতে পারে। আর প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি অস্বাভাবিক অবতরণ (হার্ড ল্যান্ডিং) করে। ওই স্থানটি দিজমার বন ও পাহাড়ে ঘেরা। এছাড়া ঘন কুয়াশাসহ প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার তৎপরতায় অনেকটা সময় লেগে যায়।

রোববার ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে জোলফার কাছে ঘটনাটি ঘটে। আল জাজিরা জানায়, ইব্রাহিম রাইসি একদিন আগেই পার্শ্ববর্তী আজারবাইজানে গিয়েছিলেন। তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে যান।

কোন ধরনের হেলিকপ্টার প্রেসিডেন্ট ও তার সঙ্গীদের বহন করছিল, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ইরান বিভিন্ন ধরনের হেলিকপ্টার পরিচালনা করে থাকে। তবে কয়েক দশকের নিষেধাজ্ঞা দেশটির জন্য নতুন এয়ারক্র্যাফট কেনা এবং যন্ত্রাংশ পাওয়া কঠিন করে তুলেছে।  

ইরানে এখনো ব্যবহৃত সামরিক অনেক এয়ারক্র্যাফটই ১৯৭৯ সালের বিপ্লবেরও আগের।  

রোববার রাজধানী তেহরান থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক রেসুল সারদার বলেন, ইরানে হেলিকপ্টার, প্লেন যেগুলো ব্যবহার করা হয়, সেগুলো বেশ পুরোনো।

এদিকে দুর্ঘটনার খবর আসার পরে রাশিয়া, আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইরান হেলিকপ্টারটির উদ্ধার ও অনুসন্ধানে সহযোগিতার প্রস্তাব দেয়। হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ তদন্তেও সহযোগিতার প্রস্তাব দেয় দেশগুলো। হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ঘটনার বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস দুর্ঘটনার খবর রেখেছেন।

পরে রেড ক্রিসেন্টের ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট হেডকোয়ার্টার ঘোষণা করে, উদ্ধারকারী দল তুর্কি আকিনজি ড্রোন দিয়ে দুর্ঘটনাস্থল চিহ্নিত করতে পেরেছে। ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের তাভিল গ্রামের কাছে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। সেখানে অন্তত ৭৩টি উদ্ধারকারী দল কাজ করেছে। সে সময় ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ আইআরএনএ এর এক প্রতিবেদনে কোলিভান্দ জানিয়েছিলেন, ‘সেখানে পরিস্থিতি ভালো না। ’

অবশেষে আজ সকালে বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটিতে ভ্রমণকারীদের মধ্যে কেউ বেঁচে নেই বলে নিশ্চিত করে ইরান।

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কবলে পড়া ইরানের প্রেসিডেন্ট দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা আলি খামেনির ঘনিষ্ঠ কট্টরপন্থী ধর্মীয় নেতা বলে পরিচিত।

৬৩ বছর বয়সী রাইসি ২০২১ সালে দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশটির মোরালিটি বা নৈতিকতাবিষয়ক আইন কঠোর করার নির্দেশ দেন।

কট্টরপন্থী হওয়ার কারণে তিনি সরকারবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভের মুখেও পড়েন। বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনায় তিনি কঠোর চাপও সৃষ্টি করেন।

অনেকে মনে করেন, তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উত্তরসূরি হওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করছেন।

২০১৯ সালে সর্বোচ্চ নেতা রাইসিকে বিচার বিভাগের প্রধানের শক্তিশালী পদে নিযুক্ত করেন। রাইসি বিশেষজ্ঞদের অ্যাসেম্বলির ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবেও নির্বাচিত হন। ইরানে ৮৮ সদস্যের এ বোর্ড দেশটির পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচন করে থাকে।

এদিকে যদি প্রেসিডেন্টের হঠাৎ মৃত্যু হয় সেক্ষেত্রে ইরানের সংবিধান অনুযায়ী ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন। দেশটির ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নেতার অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।  

ইরানের রাজনৈতিক অনুক্রম অনুযায়ী রাষ্ট্রের প্রধান হলেন সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনি। আর সরকারের প্রধান হলেন প্রেসিডেন্ট, সেকেন্ড-ইন-কমান্ড।

সেকেন্ড-ইন-কমান্ড মারা গেলে ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট দায়িত্বে বসবেন। ৫০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিধান রয়েছে দেশটিতে।